ব্যাংকে ঋণ ব্যবস্থাপনার ভুমিকা/ গুরুত্ব
ঋণ আবেদন প্রক্রিয়ার ধাপসমূহ
একটি উত্তম ঋণ প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য / প্রস্তাব মূল্যায়নের বিভিন্ন দিক
বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ কর্তৃক প্রবর্তিত বিভিন্ন প্রকার ঋণ
অর্থনৈতিক উন্নয়নে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতকরণে কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানে অর্থায়নের ভুমিকা
সংঘবদ্ধ বা সিন্ডিকেট অর্থায়ন ও এর কার্যাবলি
সিন্ডিকেট অর্থায়ন এর সুবিধা
ইজারা অর্থায়ন
ইজারা অর্থায়ন এর উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব
ইজারার মাধ্যমে অর্থায়নের সম্ভাব্য ক্ষেত্র
বিনিয়োগের জন্য ঋণগ্রহীতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া/উপায়
প্রাথমিক ও মধ্যম পর্যায়ের সহজামানত বন্ধকির মধ্যে পার্থক্য
ঋণের ঝুঁকি
উচ্চ ঋণ ঝুঁকির সূচকসমূহ
বাংলাদেশ ব্যাংক এর ICRRS অনুসারে আভ্যন্তরীন ঋণের ঝুঁকি গ্রেডিং ও মানসমূহ
কেন্দ্রীয় এবং শাখাভিত্তিক ঋন মডেলের মধ্যে পার্থক্য
বিভিন্ন ধরণের ঋন শ্রেনীকরণ
গুণগত মান বিবেচনায় ঋণ শ্রেণীকরণের ক্ষেত্রসমূহ
ঋণ পুণঃতফসিলিকরণের উদ্দেশ্য ও ক্ষেত্রসমূহ
সমস্যাগ্রস্ত ঋণে পরিণত হওয়া রোধের উপায়
ঋণ অবলোপনের পর আদায় পদ্ধতি
ঋণ কেন্দ্রীভুতকরণ ঝুঁকি ও এর পদ্ধতি
প্রভিশন ও ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় প্রভিশনের ভুমিকা / আর্থিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভিশন ঘাটতির প্রভাব
সমচ্ছেদ বিন্দু বিশ্লেষণ ও সমচ্ছেদ বিন্দু বিশ্লেষণের অণুমানসমূহ
নিরাপত্তা প্রান্ত বা মারজিন অফ সেফটি
ঋণের মূল্য নির্ধারণ ও এর বিবেচ্য বিষয়সমূহ
আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণের বিভিন্ন প্রকার অনুপাতসমূহ
আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণের গুরুত্ব ও পদ্ধতি
সেট অফ বা সমণ্বয়করণ ও সেট অফ এর বৈশিষ্টসমূহ
অর্থ ঋণ আদালত অনুযায়ী মামলা দায়ের করার ধাপসমূহ
ডকুমেন্টেশন বা দালিলিকরণ ও দালিলিকরণের ধাপসমূহ
মৌলিক চার্জ ডকুমেন্টসমূহ
প্লেজ ও হাইপোথেকেশনের মধ্যে পার্থক্য
অন-সাইট ও অফ-সাইট মনিটরিং
ঋণের তদারকির গুরুত্ব
ব্যাংকার ও গ্রাহকের মধ্যে সম্পর্ক এবং অতিরিক্ত বাধ্যবাধকতা
ক্যাশ ক্রেডিট ও ক্যাশ ক্রেডিটের প্রকারভেদ
ঋণ পরিকল্পনার গুরুত্ব
ঋণ পরিকল্পনার জন্য ব্যাংকের বিবেচ্য বিষয়
আভ্যন্তরীন ঋণ ঝুঁকি রেটিং পদ্ধতির ব্যবহার
ঋণ তল্লাশীর ধাপসমূহ
ঋণ তল্লাশীর উদ্দেশ্যসমূহ
স্টান্ডএলোন ঋণ ঝুঁকির কারণসমূহ
ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সাধারণ পদক্ষেপসমূহ
সিকিউরিটির বিমা কভারেজের গুরুত্ব
নিয়মিত ঋণ আদায়ের গুরুত্ব
নন পারফর্মিং ঋণ আদায়ের আইন বহির্ভুত পদ্ধতিসমূহ
একটি প্রকল্পের অর্থায়নের বিভিন্ন উপায়
ব্যাংকের ঋণ ব্যবস্থাপনার ভুমিকা
রেজিস্টার্ড মর্টগেজ ও ঋকুইটেবল মর্টগেজ এর মধ্যে পার্থক্য
উত্তম লীজ দলিলের উপাদানসমূহ
হায়ার-পারচেজ অর্থায়নের সুবিধাসমূহ
চলতি মূলধন
চলতি মূলধনের প্রয়োজনীয়তার উপর প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান
টীকাসমূহ:
ব্যাক টু ব্যাক এলসি; ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম; ভোক্তা ঋণ ; তৃতীয় পক্ষের গ্যারান্টি ;
গ্রেস পিরিয়ড ; পরি পসু চার্জ; স্থগিত সুদ; ঋণের অবলোপন ;
ঋণাত্মক লিয়েন; অল্টারনেট ডিসপিউট রেজুলেশন; স্পেশাল মেনশন হিসাব; স্পর্শকাতরতা বিশ্লেষণ;
ক্যামেল রেটিং; সুদ ভর্তুকি ; পুণঃ অর্থায়ন প্রকল্প ;
ঝুঁকি মেট্রিক্স; ক্রেডিট ডেরিভেটিভ; লেন্ডার অব লাস্ট রিসোর্ট;
ওপেন মার্কেট অপারেশন; খেলাপী ঋণ; তারল্য অনুপাত;
অফশোর ব্যাংকিং; মার্জিন অব সেফটি; সম্ভাব্য ঋণ ক্ষতি;
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন -যা IBB’র রিডিং ম্যাটেরিয়ালে আলোচিত হয়নি
ভোক্তা ঋণের বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার (Feature of Consumer Credit):
ভোক্তা ঋণ বা Consumer Credit হল এমন একটি আর্থিক
ব্যবস্থা, যেখানে ব্যক্তি বা পরিবার তাদের
বর্তমান চাহিদা পূরণের জন্য ঋণ নেয় এবং ভবিষ্যতে তা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয়। এটি সাধারণত ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য
নেওয়া হয়, যেমন গাড়ি কেনা, বাড়ি মেরামত, শিক্ষা, চিকিৎসা, বা অন্যান্য
ভোগ্যপণ্য কেনার জন্য। ভোক্তা ঋণের
মূল উদ্দেশ্য হল ব্যক্তিকে তার বর্তমান আয়ের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠে প্রয়োজনীয় পণ্য বা সেবা
ক্রয় করতে সাহায্য করা। তবে এর ব্যবহার সতর্কতার সাথে করা প্রয়োজন, কারণ অতিরিক্ত ঋণ আর্থিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ভোক্তা ঋণের কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:
১. ব্যক্তিগত
ব্যবহারের জন্য ঋণ:
- ভোক্তা
ঋণ সাধারণত ব্যক্তিগত বা পারিবারিক চাহিদা পূরণের জন্য নেওয়া হয়।
- এটি
ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নেওয়া ঋণ থেকে আলাদা।
২. স্বল্প থেকে
মধ্যম মেয়াদী ঋণ:
- ভোক্তা
ঋণ সাধারণত স্বল্প থেকে মধ্যম মেয়াদী হয়, যেমন কয়েক মাস
থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত।
- উদাহরণস্বরূপ, ক্রেডিট কার্ড ঋণ
স্বল্পমেয়াদী, অন্যদিকে গাড়ি বা ব্যক্তিগত ঋণ মধ্যম মেয়াদী হতে পারে।
৩. নির্দিষ্ট
উদ্দেশ্যে ঋণ:
- কিছু
ভোক্তা ঋণ নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়, যেমন গাড়ি কেনা, বাড়ি মেরামত, বা শিক্ষা খরচ।
- আবার
কিছু ঋণ সাধারণ উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়, যেমন ব্যক্তিগত ঋণ, যা যেকোনো
প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়।
৪. সুদের হার:
- ভোক্তা
ঋণের উপর সুদের হার নির্ধারিত হয়, যা ঋণের ধরন, মেয়াদ, এবং ঋণগ্রহীতার
ক্রেডিট মান (Credit Score) এর উপর নির্ভর করে।
- সাধারণত, ভোক্তা ঋণের সুদের
হার ব্যবসায়িক ঋণের তুলনায় বেশি হয়।
৫. ঋণের পরিশোধ
পদ্ধতি:
- ভোক্তা
ঋণ সাধারণত কিস্তিতে পরিশোধ করা হয়, যা মাসিক বা
ত্রৈমাসিক হতে পারে। পরিশোধের মেয়াদ ঋণের ধরন এবং পরিমাণের উপর নির্ভর
করে।
৬. জামানত বা
নিরাপত্তা:
- কিছু
ভোক্তা ঋণ জামানতবিহীন (Unsecured) হয়, যেমন ক্রেডিট কার্ড ঋণ বা ব্যক্তিগত ঋণ।
- আবার
কিছু ঋণ জামানতভিত্তিক (Secured) হয়। যেমন- গাড়ি ঋণ বা হোম এপ্লায়েন্স লোন, যেখানে ঋণের
নিরাপত্তা হিসেবে সম্পদ জামানত দেওয়া হয়।
৭. ঋণগ্রহীতার
ক্রেডিট মানের উপর গুরুত্বারোপ (Credit Score):
- ভোক্তা
ঋণ পেতে ঋণগ্রহীতার ক্রেডিট মান গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে। উচ্চ ক্রেডিট স্কোর থাকলে সুদের হার কম
হতে পারে এবং ঋণ পাওয়া সহজ হয়।
৮. দ্রুত অনুমোদন
প্রক্রিয়া:
- অনেক
ভোক্তা ঋণ, বিশেষ করে ছোট ঋণ, দ্রুত অনুমোদিত হয়
এবং অর্থ দ্রুত বিতরণ করা হয়। এটি ভোক্তাদের জরুরি চাহিদা পূরণে
সাহায্য করে।
৯. বিভিন্ন ধরনের
ভোক্তা ঋণ:
- ভোক্তা
ঋণ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন: ক্রেডিট কার্ড ঋণ, ব্যক্তিগত ঋণ, গাড়ি ঋণ, শিক্ষা ঋণ, হোম ইক্যুইটি ঋণ ইত্যাদি।
১০. ঝুঁকি ও সুযোগ:
- ভোক্তা
ঋণ দ্রুত চাহিদা পূরণে সাহায্য করে, কিন্তু অতিরিক্ত ঋণ
নেওয়া আর্থিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
- সঠিকভাবে
ব্যবস্থাপনা করলে এটি আর্থিক সুযোগও তৈরি করতে পারে, যেমন ক্রেডিট মান উন্নত করা বা সম্পদ অর্জন।
ভোক্তা ঋণ আধুনিক অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা ব্যক্তিদের
তাদের চাহিদা পূরণে সাহায্য করে। তবে এর সঠিক ব্যবহার এবং পরিশোধের
দায়িত্বশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রিফাইন্যান্সিং স্কিম ও এর বৈশিষ্ট্য (Refinancing Scheme & Its Objectives:
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিফাইন্যান্সিং স্কিম হলো একটি আর্থিক প্রণোদনা ব্যবস্থা যার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে নির্দিষ্ট খাত বা প্রকল্পে ঋণ প্রদানের জন্য স্বল্প সুদে তহবিল সরবরাহ করে। এই স্কিমের মূল উদ্দেশ্য হলো অর্থনীতির বিভিন্ন প্রান্তিক ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধি করা, যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক।
### প্রধান বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য:
১. অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত সমর্থন: কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই), রপ্তানি, গ্রিন এনার্জি, গৃহায়ণ, এবং নারী উদ্যোক্তাদের মতো খাতগুলোতে ঋণ সহজলভ্য করতে এই স্কিম চালু করা হয়।
২. সুবিধাজনক সুদের হার: রি-ফিনান্সিং স্কিমে সুদের হার সাধারণত বাণিজ্যিক ব্যাংকের তুলনায় কম হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলিকে স্বল্প সুদে তহবিল দেয়, যাতে তারা শেষ ব্যবহারকারীদের কাছে সহনীয় হারে ঋণ দিতে পারে।
৩. তারল্য ব্যবস্থাপনা: ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট কমাতে এবং ঋণ প্রবাহ নিশ্চিত করতে এই স্কিম কাজ করে।
৪. জরুরি অবস্থা মোকাবিলা: প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারী ও সংকটকালীন সময় বিশেষ রি-ফিনান্সিং স্কিম চালু করা হয়, যেমন COVID-19 মহামারীর সময় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য সহায়তা।
৫. জামানতের নমনীয়তা
- কিছু রি-ফিনান্সিং স্কিমে ন্যূনতম জামানত বা জামানত ছাড়াই ঋণ প্রদান করা হয়। বিশেষ করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বা কৃষকদের জন্য জামানতের শর্ত শিথিল করা হয়।
৬. দীর্ঘমেয়াদী ঋণ সুবিধা
- কিছু স্কিমে ঋণের মেয়াদ দীর্ঘমেয়াদী (৫ বছর বা তার বেশি) হয়, যা উদ্যোক্তাদের জন্য সুবিধাজনক। বিশেষ করে কৃষি ও শিল্প খাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রদান করা হয়।
৭. সুবিধাভোগীর প্রাধান্য: যুব উদ্যোক্তা, মহিলা উদ্যোক্তা, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য বিশেষ স্কিম রয়েছে, যা তাদের কর্মসংস্থান কার্যক্রমে সহায়তা করে।
৮. মনিটরিং ও মূল্যায়ন: বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিতভাবে রি-ফিনান্সিং স্কিমগুলির মনিটরিং করে। স্কিমগুলির সাফল্য মূল্যায়নের জন্য বিভিন্ন সূচক ব্যবহার করা হয়, যেমন ঋণ বিতরণের পরিমাণ, সুবিধাভোগীর সংখ্যা ইত্যাদি।
৯. বিশেষ উদ্দেশ্য সাধন:
- দারিদ্র্য বিমোচন: ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ এবং কৃষি খাতের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন।
- অর্থনৈতিক উন্নয়ন: বিভিন্ন খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা।
- রপ্তানি বৃদ্ধি: রপ্তানি খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বৃদ্ধি।
- গ্রিন ফাইন্যান্সিং: পরিবেশবান্ধব প্রকল্পের জন্য বিশেষ রি-ফিনান্সিং স্কিম। উদাহরণস্বরূপ, সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি প্রকল্পের জন্য সহায়তা।
- টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (SDGs): রি-ফিনান্সিং স্কিমগুলি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করে।
১০. সহজ আবেদন প্রক্রিয়া
- আবেদনের সহজ প্রক্রিয়া: সাধারণত বাণিজ্যিক ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়।
- কম কাগজপত্র: কিছু স্কিমে ন্যূনতম কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়, যা উদ্যোক্তাদের জন্য সুবিধাজনক।
১১. সরকারি নীতির সাথে সঙ্গতি
- রি-ফিনান্সিং স্কিমগুলি সরকারের অর্থনৈতিক নীতি ও উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করা।
### স্কিমের প্রকারভেদ:
বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন উদ্দেশ্যে একাধিক রিফাইন্যান্সিং স্কিম চালু করেছে, যেমন:
- কৃষি ও গ্রামীণ ঋণ: কৃষকদের মৌসুমী ফসলের জন্য সহজ শর্তে ঋণ।
- এসএমই ফান্ড: ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ।
- গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড: নবায়নযোগ্য শক্তি ও পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে বিনিয়োগ।
- রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল: রপ্তানিকারকদের কর্মমূলধন ও প্রযুক্তি আধুনিকীকরণে সহায়তা।
### বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া:
১. আবেদন: বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি নির্দিষ্ট স্কিমের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করে।
২. তহবিল বরাদ্দ: কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করে তহবিল মঞ্জুর করে।
৩. ঋণ বিতরণ: বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি শেষ ব্যবহারকারীদের কাছে ঋণ প্রদান করে।
৪. মনিটরিং: বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে নিয়মিত তদারকি করে।
### সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ:
- সুবিধা: লক্ষ্যযুক্ত খাতের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, এবং অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি।
- চ্যালেঞ্জ: ঋণের অপব্যবহার, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, এবং সুদের হার হ্রাস না করা।
এই রি-ফিনান্সিং স্কিমগুলি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে সহায়তা করে।
ট্রেড ফাইন্যান্স কী ও এর মূল বৈশিষ্ট্য :
ট্রেড ফাইন্যান্স হল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বাণিজ্যিক লেনদেন সহজতর করার জন্য ব্যবহৃত আর্থিক সরঞ্জাম এবং পণ্য। এটি রপ্তানিকারক এবং আমদানিকারক এর মধ্যে ঝুঁকি কমিয়ে লেনদেনকে নিরাপদ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করে। ট্রেড ফাইন্যান্সের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক লেনদেনের ঝুঁকি যেমন পেমেন্ট না পাওয়া, মুদ্রার মান পরিবর্তন, বা রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদি মোকাবিলা করা হয়।
### ট্রেড ফাইন্যান্সের মূল উপাদান:
১. লেটার অফ ক্রেডিট (LC):
- এটি একটি ব্যাংকের গ্যারান্টি যা নিশ্চিত করে যে রপ্তানিকারক নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করলে তাকে পেমেন্ট করা হবে। এটি পেমেন্ট না পাওয়ার ঝুঁকি কমায়।
২. ডকুমেন্টারি কালেকশন:
- ব্যাংক শিপিং ডকুমেন্টগুলি হ্যান্ডেল করে এবং আমদানিকারককে পেমেন্ট বা পেমেন্টের প্রতিশ্রুতির পরই ডকুমেন্টগুলি হস্তান্তর করে।
৩. ট্রেড ক্রেডিট ইন্স্যুরেন্স:
- এটি রপ্তানিকারককে ক্রেতার দেউলিয়া হয়ে যাওয়া বা রাজনৈতিক কারণে পেমেন্ট না পাওয়ার ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দেয়।
৪. এক্সপোর্ট ও ইম্পোর্ট ফাইন্যান্সিং:
- এটি স্বল্পমেয়াদী ঋণ বা ক্রেডিট সুবিধা যা ব্যবসায়ীদের ট্রেড চক্রের সময় ক্যাশ ফ্লো ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে।
৫. ব্যাংক গ্যারান্টি:
- এটি নিশ্চিত করে যে পেমেন্ট বা পারফরম্যান্সের বাধ্যবাধকতা পূরণ হবে, উভয় পক্ষকে নিরাপত্তা প্রদান করে।
৬. ফ্যাক্টরিং এবং ফরফেইটিং:
- ফ্যাক্টরিং: রিসিভেবল (পাওনা অর্থ) একটি তৃতীয় পক্ষের কাছে ডিসকাউন্টে বিক্রি করে তাৎক্ষণিক নগদ অর্থ প্রাপ্তি।
- ফরফেইটিং: মধ্যমেয়াদী রিসিভেবল একটি ফরফেইটারের কাছে বিক্রি করা, যিনি পেমেন্টের ঝুঁকি গ্রহণ করেন।
### ট্রেড ফাইন্যান্সের সুবিধা:
- ঝুঁকি হ্রাস: পেমেন্ট না পাওয়া, মুদ্রার মান পরিবর্তন, বা রাজনৈতিক অস্থিরতার মতো ঝুঁকি কমায়।
- নগদ প্রবাহের উন্নতি: তাৎক্ষণিক কার্যকরী মূলধন সরবরাহ করে, যা ব্যবসায়ের তারল্য বজায় রাখে।
- বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি: আর্থিক যন্ত্রগুলি ব্যবসায়িক অংশীদারদের মধ্যে আস্থা বাড়ায়।
- বৈশ্বিক বাণিজ্য সহজকরণ: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে সাহায্য করে।
### উদাহরণ:
একটি জার্মান রপ্তানিকারক ব্রাজিলের একজন ক্রেতাকে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে। পেমেন্ট নিশ্চিত করার জন্য তারা ক্রেতার ব্যাংক থেকে ইস্যু করা একটি লেটার অফ ক্রেডিট ব্যবহার করে। জার্মান রপ্তানিকারক পণ্য শিপ করে এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলি তাদের ব্যাংকে জমা দেয়। এরপর ব্যাংক ক্রেতার ব্যাংক থেকে পেমেন্টের জন্য অনুরোধ করে। এই প্রক্রিয়াটি নিশ্চিত করে যে রপ্তানিকারক পেমেন্ট পায় এবং ক্রেতা চুক্তি অনুযায়ী পণ্য পায়।
সহজ কথায়, ট্রেড ফাইন্যান্স আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আর্থিক ঝুঁকি এবং পরিচালনগত চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করার জন্য অপরিহার্য, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যকে সহজতর করে।
প্রজেক্ট
ফাইন্যান্স (Project Finance):
বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের জন্য তহবিল সংগ্রহ করার
প্রক্রিয়াকেই বলা হয় প্রজেক্ট ফাইন্যান্স। প্রজেক্ট বিভিন্ন
ধরণের হতে পারে, যেমন - বড় কোনো অবকাঠামো তৈরি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল
প্রজেক্ট বা সরকারি সেবামূলক প্রজেক্ট। একটি নির্দিষ্ট সময় পর
প্রজেক্ট থেকে আসা রিটার্নের মাধ্যমে প্রজেক্ট ফাইন্যান্সের ঋণ
শোধ করে দেয়া হয়, তবে এটি ইক্যুইটি বা ঋণ উভয় ধরণের হতে পারে। প্রজেক্ট
ফাইন্যান্সের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রজেক্টের সম্পদগুলো জামানত হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ, প্রজেক্ট থেকে আসা
রিটার্নের মাধ্যমে যদি অর্থ পরিশোধ করা
সম্ভব না হয়, তাহলে প্রজেক্টের সম্পদগুলো বিক্রয় করার মাধ্যমে সেই অর্থ তুলে আনার চেষ্টা করা হয়। তাই বিশেষ
করে প্রাইভেট সেক্টরে প্রজেক্ট ফাইন্যান্সের ধারণা বেশ জনপ্রিয়, কারণ এতে করে তারা
শেয়ার বিক্রয় না করেই বড় পরিমাণ তহবিল সংগ্রহ করতে পারে।
প্রজেক্ট
ফাইন্যান্সিংয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি/উপায় :
১. ঋণ ফাইন্যান্সিং
(Debt Financing): এটি প্রজেক্ট ফাইন্যান্সিংয়ের সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি। এতে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান
বা বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ঋণ নেওয়া হয়। ঋণদাতাদের সুদসহ পরিশোধ করতে
হয়।
২. ইক্যুইটি ফাইন্যান্সিং (Equity Financing) এই পদ্ধতিতে প্রকল্পের শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করা হয়। ইক্যুইটি বিনিয়োগকারীরা প্রকল্পের মালিকানা পায় এবং লাভ-লোকসানের অংশীদার হয়। তবে এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ লাভের নিশ্চয়তা নেই।
৩. মেজানাইন ফাইন্যান্সিং (Mezzanine Financing) এটি ঋণ এবং ইক্যুইটি ফাইন্যান্সিংয়ের মিশ্রণ। মেজানাইন ফাইন্যান্সিং সাধারণত ঋণের চেয়ে কম অগ্রাধিকার পায় কিন্তু ইক্যুইটির চেয়ে বেশি। এতে প্রায়শই ইক্যুইটিতে রূপান্তরের অপশন থাকে।
৪. সরকারি অনুদান ও ভর্তুকি (Government Grants and Subsidies) কিছু প্রকল্প, বিশেষ করে পাবলিক ইন্টারেস্টের প্রকল্প যেমন অবকাঠামো, নবায়নযোগ্য শক্তি বা সামাজিক আবাসন, সরকারি অনুদান বা ভর্তুকির জন্য উপযুক্ত হতে পারে।
৫. পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (PPP) এতে সরকারি সংস্থা এবং বেসরকারি কোম্পানির মধ্যে অংশীদারিত্ব গঠন করা হয়। বেসরকারি কোম্পানি প্রকল্পের অর্থায়ন, নির্মাণ ও পরিচালনা করে এবং সরকার বা ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে অর্থ পায়।
৬. এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সি (ECA) এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সিগুলো বিদেশী প্রকল্পে পণ্য ও সেবা রপ্তানির জন্য ঋণ, গ্যারান্টি এবং বীমা প্রদান করে। এটি আন্তর্জাতিক প্রকল্পের জন্য ফাইন্যান্সিং গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
৭. দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক (MDB) বিশ্বব্যাংক বা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো MDB বা Multilateral Development Bank- গুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রকল্পের জন্য ঋণ, ইক্যুইটি বিনিয়োগ এবং গ্যারান্টি প্রদান করে।
৮. ভেন্ডর ফাইন্যান্সিং (Vendor Financing) প্রকল্পের সরঞ্জাম বা প্রযুক্তি সরবরাহকারীরা প্রকল্প কোম্পানিকে ফাইন্যান্সিং প্রদান করতে পারে। এটি বিলম্বিত পেমেন্ট বা ঋণের আকারে হতে পারে।
৯. লিজিং (Leasing) প্রকল্প কোম্পানি সরঞ্জাম বা সম্পত্তি কেনার পরিবর্তে লিজ নিতে পারে। এটি প্রাথমিক মূলধন ব্যয় কমায় এবং সময়ের সাথে ব্যয় ছড়িয়ে দেয়।
১০. রেভিনিউ-ভিত্তিক ফাইন্যান্সিং (Revenue-Based Financing) এতে বিনিয়োগকারীরা প্রকল্পে মূলধন প্রদান করে এবং চলমান আয়ের একটি অংশ পায়। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পরিশোধ করা পর্যন্ত পেমেন্ট চলতে থাকে।
১১. ক্রাউডফান্ডিং (Crowdfunding) ছোট প্রকল্পের জন্য ক্রাউডফান্ডিং একটি উপায় হতে পারে, যেখানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক মানুষের কাছ থেকে ছোট অঙ্কের তহবিল সংগ্রহ করা হয়।
১২. অ্যাসেট-ব্যাকড সিকিউরিটিজ (ABS) যেসব প্রকল্পের নিয়মিত ক্যাশ ফ্লো আছে, তারা ABS ইস্যু করতে পারে। এটি এমন বন্ড বা নোট যা আর্থিক সম্পদ (যেমন লোন, লিজ, রয়্যালটি) দ্বারা ব্যাক করা হয়।
প্রতিটি ফাইন্যান্সিং পদ্ধতির নিজস্ব সুবিধা ও ঝুঁকি রয়েছে। প্রকল্পের প্রকৃতি, ঝুঁকির প্রোফাইল, স্পনসরদের আর্থিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক পরিবেশের উপর ভিত্তি করে ফাইন্যান্সিং পদ্ধতি বেছে নেওয়া হয়। প্রায়শই একটি প্রকল্পে একাধিক পদ্ধতি একসাথে ব্যবহার করা হয়।
ঋণ
তল্লাশি বা তদন্তের উদ্দেশ্য (Purpose of
Credit Investigation):
ঋণ তল্লাশি বা
তদন্তের উদ্দেশ্য হল ঋণগ্রহীতার আর্থিক আচরণ এবং ঋণ গ্রহণের যোগ্যতা সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে
ঋণ প্রদানের সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। এখানে ক্রেডিট তদন্তের
মূল উদ্দেশ্যগুলি বর্ণনা করা হল:
১. ঋণগ্রহণের যোগ্যতা মূল্যায়ন- ঋণগ্রহীতা ঋণ বা ক্রেডিট সময়মতো পরিশোধ করার সামর্থ্য এবং ইচ্ছা আছে কিনা তা যাচাই করা। - ঋণগ্রহীতার আর্থিক স্থিতিশীলতা, আয় এবং পরিশোধের ইতিহাস বিশ্লেষণ করা।
২. ঝুঁকি হ্রাস- ঋণগ্রহীতাকে ঋণ দেওয়ার সাথে জড়িত সম্ভাব্য ঝুঁকি চিহ্নিত করা। - ঋণগ্রহীতার নির্ভরযোগ্য আর্থিক পটভূমি নিশ্চিত করে ঋণ না পরিশোধের সম্ভাবনা কমিয়ে আনা।
৩. জালিয়াতি প্রতিরোধ- ঋণগ্রহীতার পরিচয় এবং ক্রেডিট আবেদনে প্রদত্ত তথ্যের সত্যতা যাচাই করা। - জালিয়াতি বা ভুল তথ্য দেওয়ার কোনো লক্ষণ আছে কিনা তা শনাক্ত করা।
৪. নিয়মকানুন মেনে চলা - ঋণ প্রদানের প্রক্রিয়াটি আইনি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রয়োজনীয়তা মেনে চলা, যেমন অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং (AML) আইন এবং ন্যায্য ঋণ প্রদানের নীতি।
৫. ঋণের শর্ত নির্ধারণ- ঋণগ্রহীতার আর্থিক প্রোফাইল এবং ঝুঁকির স্তরের ভিত্তিতে উপযুক্ত ক্রেডিট লিমিট, সুদের হার এবং পরিশোধের শর্ত নির্ধারণ করা।
৬. ঋণদাতার স্বার্থ রক্ষা - শুধুমাত্র নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বস্ত ঋণগ্রহীতাদেরকেই ক্রেডিট দেওয়া নিশ্চিত করে ঋণদাতার আর্থিক সম্পদ সুরক্ষিত করা।
৭. আর্থিক আচরণ মূল্যায়ন - ঋণগ্রহীতার পূর্বের ক্রেডিট ইতিহাস পর্যালোচনা করা, যেমন পরিশোধের প্যাটার্ন, বকেয়া ঋণ এবং ক্রেডিট ব্যবহার। - বিলম্বিত পরিশোধ, ডিফল্ট বা দেউলিয়াত্বের মতো কোনো সতর্কতা চিহ্নিত করা।
৮. সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা - ঋণ আবেদন অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ঋণদাতাকে সঠিক এবং বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা।
৯. বিদ্যমান ঋণগ্রহীতাদের মনিটর - বিদ্যমান ঋণগ্রহীতাদের ক্রেডিট আচরণ পর্যায়ক্রমে পর্যালোচনা করা, যাতে তারা তাদের পরিশোধের দায়িত্ব পালন করছে কিনা তা নিশ্চিত করা। - তাদের আর্থিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন আছে কিনা তা শনাক্ত করা, যা তাদের ঋণ পরিশোধের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
১০. দায়িত্বশীল ঋণ প্রদান- ঋণগ্রহীতাদের অতিরিক্ত ঋণের বোঝা এড়িয়ে দায়িত্বশীলভাবে ঋণ প্রদান করা এবং আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। সর্বোপরি, ঋণ তদন্তের প্রধান উদ্দেশ্য হল ঝুঁকি কমানো, নিয়মকানুন মেনে চলা এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া, যাতে ঋণদাতা এবং ঋণগ্রহীতা উভয়ের স্বার্থ রক্ষা করা যায়।
আভ্যন্তরীণ
ঋণ ঝুঁকির হার পদ্ধতির ব্যবহার (Use of Internal Credit Risk Rating System- ICRRS):
আভ্যন্তরীণ ঋণ
ঝুঁকির হার হল একটি পদ্ধতি, যা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি
তাদের ঋণগ্রহীতাদের (borrowers) ক্রেডিট ঝুঁকি (credit risk) মূল্যায়ন ও
শ্রেণিবদ্ধ করার জন্য ব্যবহার করে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলি
ঋণগ্রহীতাদের আর্থিক অবস্থা, ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা এবং ঝুঁকির মাত্রা বিশ্লেষণ করে, যা ঋণ প্রদানের
সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়। নিচে
এই পদ্ধতির ব্যবহার ও প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হল:
১. ঋণগ্রহীতার ঋণের ঝুঁকি মূল্যায়ন: এই পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি ঋণগ্রহীতাদের আর্থিক ইতিহাস, আয়, সম্পদ, দায়বদ্ধতা এবং ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা বিশ্লেষণ করে। - উদাহরণস্বরূপ, একজন ঋণগ্রহীতার ক্রেডিট স্কোর, আয়ের উৎস এবং পূর্বের ঋণ পরিশোধের রেকর্ড পর্যালোচনা করা হয়।
২. ঋণগ্রহীতাদের মান নির্ধারণ (Rating): - আভ্যন্তরীণ ঋণ ঝুঁকি হার পদ্ধতির মাধ্যমে ঋণগ্রহীতাদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। প্রতিটি ক্যাটাগরি নির্দিষ্ট ঝুঁকির মাত্রা নির্দেশ করে। - উদাহরণস্বরূপ: - উচ্চ রেটিং (Low Risk): যাদের ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা বেশি এবং ঝুঁকি কম। - মধ্যম রেটিং (Medium Risk): যাদের ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা মধ্যম পর্যায়ের এবং ঝুঁকি মাঝারি। - নিম্ন রেটিং (High Risk): যাদের ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা কম এবং ঝুঁকি বেশি।
৩. ঋণ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ: - এই রেটিং পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যাংকগুলি ঋণ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়। উচ্চ রেটিংপ্রাপ্ত ঋণগ্রহীতাদের সাধারণত ঋণ সহজে মঞ্জুর করা হয়, যেখানে নিম্ন রেটিংপ্রাপ্ত ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রে ঋণ প্রদানে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। - উদাহরণস্বরূপ, উচ্চ রেটিংপ্রাপ্ত ঋণগ্রহীতাদের কম সুদের হার বা বেশি ঋণের পরিমাণ দেওয়া হতে পারে।
৪. ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management) - এই পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যাংকগুলি তাদের ঋণ পোর্টফোলিওর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা করে। এটি প্রতিষ্ঠানগুলিকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ এড়াতে এবং সামগ্রিক ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। - উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি ব্যাংক দেখে যে তার ঋণ পোর্টফোলিওতে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পরিমাণ বেশি, তবে এটি ঋণ প্রদানের নীতিমালা কঠোর করতে পারে।
৫. নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাহিদা পূরণ: - অনেক দেশের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংক) ব্যাংকগুলিকে ইন্টারনাল ক্রেডিট রিস্ক রেটিং সিস্টেম ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়। এটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিয়ন্ত্রক মানদণ্ড পূরণ করতে সাহায্য করে। - উদাহরণস্বরূপ, ব্যাসেল III (Basel III) নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকগুলিকে তাদের ঋণ পোর্টফোলিওর ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে হয়।
৬. ঋণের শর্তাবলী নির্ধারণ: - এই সিস্টেমের মাধ্যমে ব্যাংকগুলি ঋণের শর্তাবলী (যেমন সুদের হার, ঋণের মেয়াদ, জামানতের প্রয়োজনীয়তা) নির্ধারণ করে। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ঋণগ্রহীতাদের সাধারণত উচ্চ সুদের হার বা অতিরিক্ত জামানতের প্রয়োজন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ঋণগ্রহীতাকে ১২% সুদের হার দেওয়া হতে পারে, যেখানে একজন নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ ঋণগ্রহীতাকে ৮% সুদের হার দেওয়া হতে পারে।
৭. ঋণ পোর্টফোলিও মনিটরিং: - এই সিস্টেমের মাধ্যমে ব্যাংকগুলি তাদের ঋণ পোর্টফোলিওর ক্রমাগত মনিটরিং করে। এটি ঋণগ্রহীতাদের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন এবং সম্ভাব্য ডিফল্ট (default) ঝুঁকি শনাক্ত করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো ঋণগ্রহীতার আর্থিক অবস্থার অবনতি হয়, তবে ব্যাংক তা শনাক্ত করে প্রাথমিক ব্যবস্থা নিতে পারে।
৮. ক্রেডিট পলিসি উন্নয়ন: - আভ্যন্তরীণ ঋণ ঝুঁকি হার পদ্ধতি প্রতিষ্ঠানগুলিকে তাদের ক্রেডিট পলিসি উন্নয়নে সাহায্য করে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের ক্রেডিট পলিসির কার্যকারিতা মূল্যায়ন করে এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তন বা উন্নয়ন করে।
৯. ঋণগ্রহীতাদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন: - এই পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলি ঋণগ্রহীতাদের সাথে তাদের সম্পর্ক উন্নয়ন করতে পারে। উচ্চ রেটিংপ্রাপ্ত ঋণগ্রহীতাদের সাথে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং নিম্ন রেটিংপ্রাপ্ত ঋণগ্রহীতাদের জন্য উপযুক্ত সমাধান প্রদান করা সম্ভব হয়।
১০. ডেটা বিশ্লেষণ এবং রিপোর্টিং: - আভ্যন্তরীণ
ঋণ ঝুঁকি হার পদ্ধতি প্রতিষ্ঠানগুলিকে ডেটা বিশ্লেষণ এবং রিপোর্টিং করার
সুযোগ দেয়। এই সিস্টেমের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের ক্রেডিট ঝুঁকি
সম্পর্কিত ডেটা সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং রিপোর্ট তৈরি করে, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।
-আভ্যন্তরীণ ঋণ
ঝুঁকির পদ্ধতি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে ঋণগ্রহীতাদের ঝুঁকি
সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা করতে সাহায্য করে। এটি
ঋণ প্রদানের সিদ্ধান্তকে আরও দক্ষ ও নিরাপদ করে তোলে এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা
বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ব্যাংকগুলি
বিনিয়োগের জন্য শিল্প বিশ্লেষণ পরিচালনা পদ্ধতি ( Process of industry analysis for investment):
ব্যাংকগুলি
বিনিয়োগের জন্য শিল্প বিশ্লেষণ পরিচালনা করে বিভিন্ন পদ্ধতি এবং কৌশল ব্যবহার করে। এই বিশ্লেষণের মূল উদ্দেশ্য হল
শিল্পের বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্যত সম্ভাবনা, ঝুঁকি এবং
সুযোগগুলি মূল্যায়ন করা। ব্যাংকগুলি কীভাবে শিল্প
বিশ্লেষণ পরিচালনা করে তার কিছু প্রধান ধাপ এবং পদ্ধতি:
১. শিল্পের
সামগ্রিক অবস্থা বিশ্লেষণ : - আর্থিক অবস্থা: ব্যাংকগুলি শিল্পের উপর
প্রভাব ফেলতে পারে এমন ম্যাক্রোইকোনমিক
ফ্যাক্টরগুলি বিশ্লেষণ করে, যেমন জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, সুদের হার, বেকারত্বের হার
ইত্যাদি। - রাজনৈতিক ও আইনি পরিবেশ: সরকারি নীতি, কর কাঠামো, বাণিজ্য নিয়ম, এবং অন্যান্য আইনি বিষয়গুলি শিল্পের উপর কী প্রভাব ফেলতে
পারে তা মূল্যায়ন করা হয়।
২. শিল্পের কাঠামো বিশ্লেষণ: - পোর্টার'স ফাইভ ফোর্সেস মডেল: এই মডেল ব্যবহার করে ব্যাংকগুলি শিল্পের প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ বিশ্লেষণ করে। এটি নিম্নলিখিত পাঁচটি ফ্যাক্টর বিবেচনা করে: 1. প্রতিযোগীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা: শিল্পে বিদ্যমান প্রতিযোগিতার মাত্রা। 2. নতুন প্রবেশকারীদের হুমকি: নতুন কোম্পানির প্রবেশের সম্ভাবনা। 3. বিকল্প পণ্য বা সেবার হুমকি: অন্যান্য শিল্পের পণ্য বা সেবার প্রতিযোগিতা। 4. সরবরাহকারীদের ক্ষমতা: সরবরাহকারীদের দরকষাকষির ক্ষমতা। 5. ক্রেতাদের ক্ষমতা: ক্রেতাদের দরকষাকষির ক্ষমতা।
৩. শিল্পের আর্থিক বিশ্লেষণ: - আর্থিক অনুপাত বিশ্লেষণ: ব্যাংকগুলি শিল্পের প্রধান কোম্পানিগুলির আর্থিক অনুপাত (যেমন লাভের মার্জিন, রিটার্ন অন ইক্যুইটি, ঋণ-থেকে-ইক্যুইটি অনুপাত) বিশ্লেষণ করে শিল্পের আর্থিক স্বাস্থ্য মূল্যায়ন করে। - রেভেনিউ এবং লাভের প্রবণতা: শিল্পের রেভেনিউ এবং লাভের প্রবণতা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা মূল্যায়ন করা হয়।
৪. প্রযুক্তিগত এবং উদ্ভাবনী প্রবণতা বিশ্লেষণ: - প্রযুক্তির উন্নয়ন: শিল্পে নতুন প্রযুক্তির প্রবর্তন এবং উদ্ভাবন কীভাবে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ পরিবর্তন করতে পারে তা বিশ্লেষণ করা হয়। - R&D বা গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ: শিল্পের কোম্পানিগুলির গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) বিনিয়োগের মাত্রা এবং এর প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়।
৫. বাজার বিশ্লেষণ: - চাহিদা এবং সরবরাহ: শিল্পের পণ্য বা সেবার চাহিদা এবং সরবরাহের অবস্থা বিশ্লেষণ করা হয়। - বাজার ভাগ: শিল্পের প্রধান খেলোয়াড়দের বাজার ভাগ এবং তাদের অবস্থান মূল্যায়ন করা হয়।
৬. ঝুঁকি বিশ্লেষণ: - বাজারের ঝুঁকি: বাজার অবস্থার পরিবর্তন, মুদ্রার মান পরিবর্তন, এবং অন্যান্য বাজারের ঝুঁকি বিশ্লেষণ করা হয়। - ক্রেডিট ঝুঁকি: শিল্পের কোম্পানিগুলির আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা মূল্যায়ন করা হয়। - পরিচালনগত ঝুঁকি:শিল্পের অপারেশনাল দক্ষতা এবং সম্ভাব্য সমস্যা বিশ্লেষণ করা হয়।
৭. প্রতিযোগিতামূলক বিশ্লেষণ: - প্রতিযোগীদের কৌশল: শিল্পের প্রধান প্রতিযোগীদের ব্যবসায়িক কৌশল, বাজার অবস্থান, এবং শক্তি ও দুর্বলতা বিশ্লেষণ করা হয়। - SWOT বিশ্লেষণ: শিল্পের শক্তি (Strengths), দুর্বলতা (Weaknesses), সুযোগ (Opportunities), এবং হুমকি (Threats) বিশ্লেষণ করা হয়।
৮. ভবিষ্যতের প্রবণতা এবং পূর্বাভাস: - বাজার প্রবণতা: শিল্পের ভবিষ্যত প্রবণতা এবং সম্ভাব্য পরিবর্তনগুলি পূর্বাভাস দেওয়া হয়। - বিনিয়োগের সুযোগ: শিল্পে বিনিয়োগের সম্ভাব্য সুযোগ এবং ঝুঁকি মূল্যায়ন করা হয়।
৯. নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং পরিবেশগত দিক: - রেগুলেটরি পরিবেশ: শিল্পের উপর প্রভাব ফেলতে পারে এমন নিয়মকানুন এবং রেগুলেটরি পরিবেশ বিশ্লেষণ করা হয়। - পরিবেশগত প্রভাব:শিল্পের পরিবেশগত প্রভাব এবং টেকসই উন্নয়নের সম্ভাবনা মূল্যায়ন করা হয়।
১০. বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত: - বিনিয়োগের সুপারিশ:উপরোক্ত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ব্যাংকগুলি শিল্পে বিনিয়োগের জন্য সুপারিশ প্রদান করে। এটি হতে পারে ইক্যুইটি, ঋণ, বা অন্যান্য আর্থিক পণ্যের মাধ্যমে বিনিয়োগ। ### ব্যাংকগুলি শিল্প বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শিল্পের বিভিন্ন দিক গভীরভাবে মূল্যায়ন করে। এই বিশ্লেষণ শিল্পের বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্যত সম্ভাবনা, এবং ঝুঁকিগুলি বুঝতে সাহায্য করে, যা ব্যাংকগুলিকে সঠিক বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।
-----------------
ঋণ জামানতের বীমা কভারেজ এর গুরুত্ব (importance of Insurance Coverage of Loan Security):
ঋণ জামানতের বীমা কভারেজ একটি আর্থিক সুরক্ষা ব্যবস্থা, যা ঋণদাতা (যেমন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান) এবং ঋণগ্রহীতা (যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ঋণ নেয়) উভয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ঋণের সাথে জড়িত ঝুঁকি কমাতে এবং আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
১. ঋণদাতার জন্য নিরাপত্তা (Security for the Lender):
ঋণ জামানতের বীমা মূলত ঋণদাতাকে সুরক্ষা প্রদান করে। যখন ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তখন ঋণদাতার ক্ষতি পূরণের জন্য বীমা কোম্পানি এগিয়ে আসে।
- ঝুঁকি হ্রাস: ঋণদাতার জন্য এটি একটি বড় ঝুঁকি হ্রাসকারী ব্যবস্থা। ঋণগ্রহীতা যদি কোনো কারণে ঋণ শোধ করতে না পারে (যেমন মৃত্যু, পঙ্গুত্ব, বা দেউলিয়াত্ব), বীমা কভারেজ সেই ক্ষতি পূরণ করে।
- ঋণ প্রদানে উৎসাহ: বীমা থাকায় ঋণদাতারা বেশি আত্মবিশ্বাসের সাথে ঋণ প্রদান করে, বিশেষ করে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রে।
- আর্থিক স্থিতিশীলতা: ঋণদাতার আর্থিক অবস্থা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে, কারণ বীমা থাকলে ঋণখেলাপির হার কমে।
২. ঋণগ্রহীতার জন্য সুরক্ষা (Protection for the Borrower):
ঋণগ্রহীতার জন্যও বীমা কভারেজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদেরকে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে আর্থিক চাপ থেকে রক্ষা করে।
- অপ্রত্যাশিত ঘটনায় সুরক্ষা: যদি ঋণগ্রহীতা মারা যায়, পঙ্গু হয়ে যায়, বা চাকরি হারায়, তাহলে বীমা কভারেজ ঋণের দায় পরিশোধ করে। এটি ঋণগ্রহীতার পরিবারকে আর্থিক সংকট থেকে রক্ষা করে।
- ঋণের বোঝা কমায়: বীমা থাকলে ঋণগ্রহীতাকে ঋণের পূর্ণ দায় বহন করতে হয় না, বিশেষ করে যখন তার আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়।
- মানসিক শান্তি: ঋণগ্রহীতা নিশ্চিন্তে ঋণ নিতে পারে, কারণ সে জানে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় বীমা তাকে সুরক্ষা দেবে।
৩. ঋণের শর্ত সহজীকরণ (Easier Loan Terms):
ঋণ জামানতের বীমা থাকলে ঋণদাতারা ঋণের শর্ত সহজ করতে প্রস্তুত হয়।
- কম সুদের হার: বীমা থাকায় ঋণদাতার ঝুঁকি কমে, তাই তারা কম সুদের হার প্রস্তাব করতে পারে।
- দীর্ঘমেয়াদী ঋণ: বীমা কভারেজ থাকলে ঋণগ্রহীতা দীর্ঘমেয়াদে ঋণ নিতে পারে, যা মাসিক কিস্তির পরিমাণ কমিয়ে আনে।
- ঋণ অনুমোদনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি: বীমা থাকলে ঋণগ্রহীতার ঋণ অনুমোদনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়, বিশেষ করে যাদের ক্রেডিট স্কোর কম বা আয়ের উৎস অনিয়মিত।
৪. আর্থিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন (Financial Stability and Economic Growth):
ঋণ জামানতের বীমা কভারেজ শুধু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়, এটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
- আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা: বীমা থাকায় ঋণখেলাপির হার কমে, যা ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।
- অর্থনৈতিক উন্নয়ন: ঋণ সহজলভ্য হলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য করে।
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: বীমা কভারেজ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে, যা তাদেরকে আরও সক্রিয়ভাবে ঋণ প্রদানে উৎসাহিত করে।
৫. আইনি ও চুক্তিগত বাধ্যবাধকতা (Legal and Contractual Obligations):
কিছু ক্ষেত্রে ঋণ জামানতের বীমা বাধ্যতামূলক।
- আইনি প্রয়োজন: কিছু দেশ বা অঞ্চলে উচ্চমূল্যের ঋণের ক্ষেত্রে বীমা কভারেজ বাধ্যতামূলক করা হয়।
- চুক্তির শর্ত: অনেক ঋণ চুক্তিতে বীমা কভারেজ একটি শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এটি ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতা উভয়ের জন্য বাধ্যতামূলক করে।
### ৬. ঋণগ্রহীতার ক্রেডিট স্কোর সুরক্ষা (Protection of Borrower's Credit Score):
যদি ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তাহলে তার ক্রেডিট স্কোর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু বীমা কভারেজ থাকলে ঋণের দায় পরিশোধ করা হয়, ফলে ঋণগ্রহীতার ক্রেডিট স্কোর সুরক্ষিত থাকে। এটি ভবিষ্যতে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে তার সুযোগ বৃদ্ধি করে।
৭. সামগ্রিক সুবিধা (Overall Benefits):
- ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতা উভয়ের জন্য জয়-জয় পরিস্থিতি তৈরি করে।
- অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আনে।
- ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আর্থিক পরিকল্পনাকে আরও সুরক্ষিত করে।
ঋণ জামানতের বীমা কভারেজ শুধু একটি আর্থিক পণ্য নয়, এটি একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা যা ঋণ প্রক্রিয়াকে নিরাপদ, সহজ এবং কার্যকর করে তোলে। এটি ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতা উভয়ের জন্য আর্থিক ঝুঁকি কমায় এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই, ঋণ নেওয়ার সময় বীমা কভারেজ নেওয়া একটি বুদ্ধিমানের সিদ্ধান্ত।
বীমা কভারেজ এর ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন (Precautions regarding Insurance Coverage):
১. ব্যাংক এবং ঋণগ্রহীতার যৌথ নামে অথবা ঋণগ্রহীতার হিসাবের জন্য ব্যাংকের নামে বীমা পলিসি খুলতে হবে। যদি পলিসি ঋণগ্রহীতার নামে হয় তাহলে এটি ব্যাংকের অনুকূলে বরাদ্ধ করতে হবে। মূল পলিসি ব্যাংকের হেফাজতে থাকবে। এই নিয়মের শুধুমাত্র ব্যতিক্রম হয় সমুদ্র বিমার ক্ষেত্রে।
পলিসির নির্ধারিত তারিখ অবশ্যই লিপিবদ্ধ করতে হবে যাতে সময় মত প্রিমিয়ামের অর্থ পরিশোধ করা যায় এবং গ্রাহক কর্তৃক পরিশোধিত রশিদ নথিপত্রের সাথে সংযুক্ত করে রাখতে হবে।
২. ব্যাংকারকে বীমা পলিসিটি সম্পূর্ণভাবে অধ্যয়ন করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে বিদ্যমান ওয়ারেন্টি এবং শর্তাবলী ঋণ গ্রহীতা কর্তৃক লঙ্ঘিত হয়নি। এরূপ কোন শর্ত বা ওয়ারেন্টি তত্ত্বাবধানের অভাবে বীমা কোম্পানি বা কর্পোরেশন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দাবি প্রত্যাখ্যান করতে পারে।
৩. বন্ধকী পণ্য বা দ্রব্য কম মূল্যে বীমা করা উচিত নয়। এগুলো পূর্ণ মরলে বীমা করা উচিত অন্যথায় কোনরকম ক্ষতির ক্ষেত্রে মূল অন্তর্নিহিত গড়ের শর্ত প্রযোজ্য হবে। যখন বীমা কোম্পানি ক্ষতির সম্পূর্ণ পরিমাণের জন্য দায়বদ্ধ থাকবে না তবে শুধুমাত্র আনুপাতিক হারে বীমাকারীকে পরিশোধ করবে।
৪. বীমা বিহীন পণ্যের সাথে বীমার কৃত পণ্য সংরক্ষণের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। এ সকল পণ্য একই গুদামে সংরক্ষিত থাকলে সে ক্ষেত্রে সমগ্র মজুদের বীমা করতে হবে
৫. সমগ্র পলিসিতে অবশ্যই ব্যাংক ক্লজ অন্তর্ভুক্ত থাকবে যা মর্গেজ ক্লজ নামেও পরিচিত যা ব্যাংকে অধিকতর নিরাপত্তা প্রদান করবে। এই ধারার অধীনে ঋণগ্রহীতার রেফারেন্স ছাড়াই বীমাকারি ব্যাংকের সাথে দাবি নিষ্পত্তি বা আপোষ করতে পারবে।
৬. যদি বন্ধককৃত পণ্যগুলো ব্যাংকের পক্ষে ক্লিয়ারিং এজেন্টদের হেফাজতে রাখা হয় সে ক্ষেত্রে ব্যাংকের নামে ঋণগ্রহীতার হিসাব শিরোনামে একটি আলাদা পলিসি থাকতে হবে।
৭. বীমার মূল বিষয়বস্তু পণ্য বা সম্পত্তি এবং যে গুদামে পণ্য সংরক্ষণ করা হয়েছে তা পলিসিতে সঠিকভাবে বর্ণনা থাকতে হবে। কোন বিষয়ে কোনো ভুল বর্ণনা বা বিবৃতি করা উচিত নয়। অন্যথায় ভুল উপস্থাপন বা জালিয়াতির অজুহাতে কর্তৃপক্ষ চুক্তি লঙ্ঘন করতে পারে।
৮. বিমাকৃত স্টক বা সম্পত্তির ক্ষতির ক্ষেত্রে বীমা কোম্পানি কর্পোরেশনকে অবশ্যই এর অবস্থান সম্পর্কে টেলিফোন অবিলম্বে অবহিত করতে হবে । সেই সাথে একটি নিশ্চিতকরণের চিঠি বিনিময় করতে হবে।
৯. একটি অগ্নি বা অন্য ধরনের বীমার দাবি বিমাকারি কর্তৃক পরিশোধের সময় বীমাকৃত টাকার পরিমাণের চেয়ে হ্রাসকৃত হারে দাবি পরিশোধ করা হয়। যদি পলিসিটি মূল টাকার পরিমাণে পুনর্বহাল করা হয়, সে ক্ষেত্রে বিমাকারীর সাথে যোগাযোগ করতে হবে এবং অতিরিক্ত প্রিমিয়াম প্রদান করতে হবে। যদি ঋণগ্রহীতা তার অগ্রিম হিসাবটি বন্ধ করে দেয় সে ক্ষেত্রে তার অনুকূলে নির্ধারিত বীমা পলিসিটি প্রাপ্তি স্বীকারের মাধ্যমে তাকে হস্তান্তর করতে হবে।
প্লেজ (Pledge) এবং হাইপোথিকেশন (Hypothecation) এর মধ্যে পার্থক্য:
প্লেজ (Pledge) এবং হাইপোথিকেশন (Hypothecation) দুটি আলাদা আর্থিক ধারণা, যা সাধারণত ঋণ বা জামানতের সাথে সম্পর্কিত। এদের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ:
### প্লেজ (Pledge):
সংজ্ঞা: প্লেজ হলো জামানত হিসাবে কোনো সম্পত্তি ঋণদাতার কাছে জমা দেওয়া, তবে সম্পত্তির মালিকানা ঋণগ্রহীতার কাছেই থাকে। ঋণ পরিশোধ না হলে ঋণদাতা সম্পত্তিটি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে পারেন।
হাইপোথিকেশন হলো ঋণের জামানত হিসাবে কোনো সম্পত্তি ব্যবহার করা, তবে সম্পত্তির দখল ও মালিকানা উভয়ই ঋণগ্রহীতার কাছে থাকে। ঋণ পরিশোধ না হলে ঋণদাতা আইনি প্রক্রিয়ায় সম্পত্তি দখল করতে পারেন।
উদাহরণ: ব্যাংকে গহনা বা শেয়ার জামানত রেখে ঋণ নেওয়া গাড়ি বা যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ঋণ নেওয়া, যেখানে গাড়িটি ঋণের জামানত হিসাবে ব্যবহৃত হয় কিন্তু দখলে থাকে ঋণগ্রহীতার।
- সম্পত্তির দখল: প্লেজে সম্পত্তি ঋণদাতার কাছে জমা দেওয়া হয়, কিন্তু হাইপোথিকেশনে সম্পত্তি ঋণগ্রহীতার দখলে থাকে।
- মালিকানা: উভয় ক্ষেত্রেই মালিকানা ঋণগ্রহীতার থাকে, তবে প্লেজে সম্পত্তি ঋণদাতার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- আইনি প্রক্রিয়া: হাইপোথিকেশনে ঋণদাতাকে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সম্পত্তি দখল করতে হয়, প্লেজে তা সরাসরি করা যায়।
সেট অফের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য:
সেট-অফ হল একটি আইনি অধিকার যা ঋণদাতাকে ঋণগ্রহীতার খেলাপি হলে ঋণের বকেয়া পরিমাণ কমাতে বা পরিশোধ করতে ঋণগ্রহীতার ডিপোজিট অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্স ব্যবহার করার অনুমতি দেয়। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত ঋণ চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত থাকে যাতে ঋণদাতার স্বার্থ সুরক্ষিত হয়। লোন সেট-অফের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিচে দেওয়া হল:
১. চুক্তিভিত্তিক সম্মতি: লোন সেট-অফ সাধারণত ঋণ চুক্তির শর্তাবলী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ঋণগ্রহীতা সাধারণত ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করার সময় এই শর্তে সম্মতি দেয়।
২. খেলাপি হওয়া: সেট-অফের অধিকার সাধারণত তখন সক্রিয় হয় যখন ঋণগ্রহীতা ঋণে ডিফল্ট করে, যেমন নির্ধারিত কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয় বা ঋণ চুক্তির অন্যান্য শর্ত লঙ্ঘন করে।
৩. স্বয়ংক্রিয় বা শর্তাধীন: এটা নির্ভর করে আইনি এখতিয়ার এবং ঋণ চুক্তির নির্দিষ্ট শর্তাবলীর উপর। সেট-অফ ডিফল্টের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে হতে পারে, অথবা ঋণদাতাকে এটি প্রয়োগ করার জন্য নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হতে পারে।
৪. ক্রস-হিসাব প্রয়োগ: ঋণদাতা ঋণগ্রহীতার বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে সেট-অফ প্রয়োগ করতে পারে, শুধুমাত্র ঋণের সাথে যুক্ত অ্যাকাউন্টে নয়। এর মধ্যে সেভিংস অ্যাকাউন্ট, চেকিং অ্যাকাউন্ট বা ফিক্সড ডিপোজিটও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
৫. নোটিফিকেশন: কিছু ক্ষেত্রে, ঋণদাতাকে সেট-অফ প্রয়োগ করার আগে ঋণগ্রহীতাকে নোটিশ দিতে হতে পারে, যদিও এটি সর্বদা বাধ্যতামূলক নয় এবং ঋণ চুক্তি ও স্থানীয় আইনের উপর নির্ভর করে।
৬. সুদ ও ফি: সেট-অফে শুধুমাত্র ঋণের মূল পরিমাণই নয়, বকেয়া সুদ, লেট ফি বা ঋণের সাথে যুক্ত অন্যান্য চার্জও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
৭. আইনি সীমাবদ্ধতা: সেট-অফের উপর আইনি সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, যেমন ঋণগ্রহীতার অ্যাকাউন্টে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সুরক্ষিত রাখা, বিশেষ করে যদি সেই অর্থ বেসিক জীবনযাত্রার জন্য প্রয়োজন হয় বা আইন দ্বারা সুরক্ষিত হয়।
৮. দেউলিয়া বিবেচনা: ঋণগ্রহীতার দেউলিয়া হওয়ার ক্ষেত্রে, সেট-অফের অধিকার দেউলিয়া কার্যক্রমের নিয়মের অধীন হতে পারে, যা ঋণদাতার এই অধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা সীমিত বা স্থগিত করতে পারে।
৯. ট্যাক্স প্রভাব: ঋণের সেট-অফের ট্যাক্স প্রভাব থাকতে পারে ঋণদাতা এবং ঋণগ্রহীতা উভয়ের জন্যই, কারণ এটিকে ঋণ মওকুফ বা আয়ের একটি রূপ হিসাবে বিবেচনা করা হতে পারে।
১০. রিকোর্স ও নন-রিকোর্স: ঋণের প্রকৃতি (রিকোর্স বা নন-রিকোর্স) সেট-অফকে প্রভাবিত করতে পারে। রিকোর্স লোনে, সেট-অফ ঋণ পরিশোধের জন্য অপর্যাপ্ত হলে ঋণদাতা ঋণগ্রহীতার অন্যান্য সম্পত্তি তলব করতে পারে। নন-রিকোর্স লোনে, ঋণদাতার ঋণ আদায়ের ক্ষমতা শুধুমাত্র ঋণের জামানতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
ঋণদাতা এবং ঋণগ্রহীতা উভয়ের জন্যই তাদের এখতিয়ার এবং ঋণ চুক্তিতে উল্লিখিত লোন সেট-অফের নির্দিষ্ট শর্তাবলী ও আইনি প্রভাব বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ। ঋণগ্রহীতাদের সেট-অফের সম্ভাবনা সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত এবং তাদের অ্যাকাউন্টগুলি সেভাবে পরিচালনা করা উচিত, অন্যদিকে ঋণদাতাদের এই অধিকার প্রয়োগ করার সময় সমস্ত আইনি প্রয়োজনীয়তা মেনে চলতে হবে।
নন-পারফর্মিং লোন এর প্রভাব বা পরিণতি
নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) হল সেই ঋণ যেখানে ঋণগ্রহীতা নির্ধারিত সময়ের জন্য (সাধারণত ৯০ দিন বা তার বেশি) কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়। এনপিএল-এর প্রভাব ব্যাপক এবং বিভিন্ন স্তরে পড়তে পারে, যেমন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ঋণগ্রহীতা এবং সামগ্রিক অর্থনীতির উপর। নিচে এনপিএল-এর প্রধান প্রভাবগুলি উল্লেখ করা হলো:
### ১. আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর প্রভাব
- লাভের হ্রাস: এনপিএল-এর কারণে ব্যাংকের সুদ আয় কমে যায়, যা তাদের মুনাফাকে সরাসরি প্রভাবিত করে।
- প্রভিশন বৃদ্ধি: ব্যাংকগুলিকে এনপিএল-এর সম্ভাব্য ক্ষতি কভার করার জন্য প্রভিশন রাখতে হয়, যা তাদের মূলধন কমিয়ে দেয়।
- মূলধন ক্ষয়: উচ্চ মাত্রার এনপিএল ব্যাংকের মূলধন ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয়, যা নিয়ন্ত্রক মূলধন প্রয়োজনীয়তা পূরণে সমস্যা সৃষ্টি করে।
- তারল্য সমস্যা: এনপিএল-এর কারণে ব্যাংকের তরল সম্পদ কমে যায়, যা নতুন ঋণ বা বিনিয়োগের জন্য ব্যবহার করা যেত।
- ক্রেডিট রেটিং হ্রাস: উচ্চ এনপিএল ব্যাংকের ক্রেডিট রেটিং কমিয়ে দিতে পারে, যা তাদের ঋণের খরচ বাড়িয়ে দেয়।
- পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি: এনপিএল ব্যবস্থাপনা এবং আদায়ের জন্য আইনি ও প্রশাসনিক ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
### ২. ঋণগ্রহীতার উপর প্রভাব
- ক্রেডিটওয়ার্থিনেস ক্ষতিগ্রস্ত: এনপিএল-এর কারণে ঋণগ্রহীতার ভবিষ্যতে ঋণ পাওয়ার ক্ষমতা কমে যায়।
- আইনি পদক্ষেপ: ঋণগ্রহীতাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে, যেমন জব্দকরণ বা সম্পত্তি বিক্রি।
- আর্থিক চাপ: ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতা ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক পর্যায়ে আর্থিক চাপ সৃষ্টি করে, যা দেউলিয়াত্বের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
### ৩. অর্থনীতির উপর প্রভাব
- ঋণ প্রদান হ্রাস: উচ্চ এনপিএল-এর কারণে ব্যাংকগুলি ঝুঁকি এড়াতে বেশি সতর্ক হয়ে উঠতে পারে, যা ব্যবসা ও ভোক্তাদের জন্য ঋণ প্রবাহ কমিয়ে দেয়।
- অর্থনৈতিক মন্দা: উচ্চ এনপিএল অর্থনীতির বৃহত্তর সমস্যার ইঙ্গিত দেয়, যেমন বেকারত্ব বা নির্দিষ্ট খাতের মন্দা, যা অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
- আর্থিক স্থিতিশীলতা ঝুঁকি: যদি ব্যাংকিং খাতে এনপিএল ব্যাপক হয়, তবে এটি আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য সিস্টেমিক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, যা ব্যাংকিং সংকটের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
- সরকারি হস্তক্ষেপ: গুরুতর ক্ষেত্রে, সরকারকে ব্যাংকগুলিকে বেলআউট বা আর্থিক ব্যবস্থা স্থিতিশীল করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হতে পারে, যা রাজস্ব ব্যয় বাড়াতে পারে।
### ৪. নিয়ন্ত্রক ও নীতিগত প্রভাব
- কঠোর নিয়ম: নিয়ন্ত্রকরা এনপিএল-এর ঝুঁকি কমাতে কঠোর ঋণ মানদণ্ড এবং উচ্চ মূলধন প্রয়োজনীয়তা আরোপ করতে পারেন।
- এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি: সরকার বা বেসরকারি সংস্থা এনপিএল কিনে ব্যবস্থাপনার জন্য এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠন করতে পারে, যা ব্যাংকের ব্যালেন্স শিট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
- স্ট্রেস টেস্ট: নিয়ন্ত্রকরা ব্যাংকগুলির স্থিতিস্থাপকতা মূল্যায়নের জন্য স্ট্রেস টেস্ট পরিচালনা করতে পারেন।
### ৫. বাজার আস্থা
- বিনিয়োগকারীর আস্থা হ্রাস: উচ্চ এনপিএল বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দিতে পারে, যা বিনিয়োগ হ্রাস এবং মূলধন পলায়নের কারণ হতে পারে।
- শেয়ার বাজার প্রভাব: উচ্চ এনপিএল-যুক্ত ব্যাংকগুলির শেয়ার মূল্য হ্রাস পেতে পারে, যা সামগ্রিক বাজার মনোবলকে প্রভাবিত করে।
### ৬. সামাজিক প্রভাব
- বেকারত্ব: ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ ব্যবসাগুলি কর্মী ছাঁটাই বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা বেকারত্ব বাড়ায়।
- সামাজিক অস্থিরতা: উচ্চ এনপিএল-এর কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সমস্যা সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যদি বৃহৎ জনগোষ্ঠী প্রভাবিত হয়।
### প্রশমন কৌশল
এনপিএল-এর প্রভাব কমাতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং নিয়ন্ত্রকরা বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করতে পারেন, যেমন:
- ঋণ পুনর্গঠন: ঋণের শর্তাবলী পরিবর্তন করে ঋণগ্রহীতার জন্য সহজে পরিশোধযোগ্য করা।
- ঋণ আদায়: আইনি পদক্ষেপ এবং সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে ঋণ আদায়ের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: সম্ভাব্য এনপিএল শনাক্তকরণ এবং তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা উন্নত করা।
- প্রুডেনশিয়াল নিয়ম: ব্যাংকগুলি যাতে প্রুডেনশিয়াল নিয়ম মেনে চলে এবং পর্যাপ্ত মূলধন বাফার বজায় রাখে তা নিশ্চিত করা।
সংক্ষেপে, নন-পারফর্মিং লোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ঋণগ্রহীতা এবং সামগ্রিক অর্থনীতির উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। এর প্রভাব কমাতে কার্যকর ব্যবস্থাপনা ও প্রশমন কৌশল অপরিহার্য।
ঋণ পর্যালোচনা ও এর উদ্দেশ্য (Credit review):
ঋণ পর্যালোচনা হল একটি মূল্যায়ন প্রক্রিয়া যেখানে একজন ঋণদাতা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ক্রেডিট ব্যুরো একজন ব্যক্তি বা ব্যবসার ঋণের যোগ্যতা মূল্যায়ন করে। এই প্রক্রিয়ায় আর্থিক ইতিহাস, ক্রেডিট আচরণ এবং বর্তমান আর্থিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে ঋণ দেওয়া বা বিদ্যমান ক্রেডিট সম্পর্ক বজায় রাখা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ।
রিভিউর উদ্দেশ্য:
- নতুন ক্রেডিট আবেদন: ঋণ বা ক্রেডিট কার্ড অনুমোদন করা হবে কিনা তা নির্ধারণ করা।
- বিদ্যমান ক্রেডিট সম্পর্ক: ক্রেডিট লিমিট, সুদের হার বা শর্তাবলী সমন্বয় করা।
- পর্যায়ক্রমিক রিভিউ: চলতি অ্যাকাউন্টের জন্য ক্রেডিট ঝুঁকি নিয়মিত মূল্যায়ন করা।
নিয়মিত ক্রেডিট রিভিউ একটি সুস্থ ক্রেডিট প্রোফাইল বজায় রাখার এবং অনুকূল আর্থিক সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ক্রেডিট মনিটরিং ক্রেডিট মনিটরিং হলো একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে গ্রাহকের ক্রেডিট রিপোর্ট, ক্রেডিট স্কোর এবং আর্থিক কার্যকলাপ নিয়মিতভাবে ট্র্যাক করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো আপনার ক্রেডিট স্বাস্থ্য বজায় রাখা, ভুল বা অসঙ্গতি শনাক্ত করা এবং পরিচয় চুরি বা জালিয়াতি থেকে সুরক্ষা দেওয়া। ক্রেডিট মনিটরিং সার্ভিসগুলি সাধারণত ক্রেডিট রিপোর্টে পরিবর্তন, নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা, ক্রেডিট ইনকোয়ারি বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যকলাপ সম্পর্কে আপনাকে সতর্ক করে।
ঋণ অবলোপনের পর তা আদায়ের পদ্ধতি:
অবলুপনকৃত ঋণ (Loan Write-Off) হল যখন একজন ঋণদাতা একটি ঋণকে তাদের আর্থিক বিবরণী থেকে সরিয়ে দেয় কারণ এটি অপ্রাপ্য হিসাবে বিবেচিত হয়। তবে, এর অর্থ এই নয় যে ঋণদাতা ঋণ আদায়ের চেষ্টা বন্ধ করে দেয়। ঋণ অবলোপনকৃত হওয়ার পরেও ঋণ আদায়ের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। এখানে কিছু সাধারণ পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:
১. অভ্যন্তরীণ আদায় প্রচেষ্টা
- অভ্যন্তরীণ কালেকশন টিম: ঋণদাতা ঋণগ্রহীতার সাথে যোগাযোগ করে ঋণ পরিশোধের জন্য আলোচনা করতে পারে। এটি ফোন কল, ইমেল এবং চিঠির মাধ্যমে করা হতে পারে।
- ঋণ পুনর্বিন্যাস: ঋণদাতা ঋণগ্রহীতাকে ঋণ পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাব দিতে পারে, যাতে ঋণগ্রহীতা ছোট, আরও সহজে পরিশোধযোগ্য কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে পারে।
২. তৃতীয় পক্ষ ঋণ আদায়কারী সংস্থা
- কালেকশন এজেন্সিতে আউটসোর্সিং: ঋণদাতা প্রায়শই অবলোপনকৃত ঋণকে তৃতীয় পক্ষের কালেকশন এজেন্সিগুলিতে ছাড় দিয়ে বিক্রি করে। এই এজেন্সিগুলি তখন ঋণ আদায়ের দায়িত্ব নেয়।
- কন্টিনজেন্সি ভিত্তিতে: কিছু এজেন্সি কন্টিনজেন্সি ভিত্তিতে কাজ করে, অর্থাৎ তারা শুধুমাত্র ঋণ আদায় করতে পারলেই অর্থ পায়।
### ৩. আইনি ব্যবস্থা
- মামলা দায়ের: ঋণদাতা বা কালেকশন এজেন্সি ঋণগ্রহীতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারে। যদি মামলায় জয়ী হয়, তাহলে তারা বেতন গার্নিশমেন্ট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লেভি বা সম্পত্তি লিয়েনের মতো আইনি উপায় ব্যবহার করে ঋণ আদায় করতে পারে।
- দেউলিয়া প্রক্রিয়া: যদি ঋণগ্রহীতা দেউলিয়া হয়ে থাকে, তাহলে ঋণদাতাকে দেউলিয়া প্রক্রিয়ায় দাবি দায়ের করতে হতে পারে।
### ৪. ঋণ বিক্রয়
- ঋণ বিক্রয়: ঋণদাতা অবলোপনকৃত ঋণকে ঋণ ক্রেতার কাছে বিক্রি করতে পারে। ক্রেতা তখন ঋণের মালিক হয় এবং ঋণ আদায়ের দায়িত্ব নেয়। বিক্রয় সাধারণত একটি উল্লেখযোগ্য ছাড়ে করা হয়, যা ঋণটি সম্পূর্ণরূপে আদায়যোগ্য নাও হতে পারে সেই ঝুঁকি প্রতিফলিত করে।
৫. ক্রেডিট রিপোর্টিং
- ক্রেডিট ব্যুরো রিপোর্টিং: ঋণদাতা অবলোপনকৃত ঋণটি ক্রেডিট ব্যুরোগুলিতে রিপোর্ট করতে পারে, যা ঋণগ্রহীতার ক্রেডিট স্কোরকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এটি ঋণগ্রহীতাকে ঋণ পরিশোধ করতে উত্সাহিত করতে পারে।
৬. ঋণ নিষ্পত্তির প্রস্তাব:
- এককালীন নিষ্পত্তি: ঋণদাতা বা কালেকশন এজেন্সি ঋণগ্রহীতাকে একটি নিষ্পত্তির অপশন অফার করতে পারে, যেখানে ঋণগ্রহীতা মোট ঋণের চেয়ে কম পরিমাণে এককালীন অর্থ প্রদান করে ঋণ পরিশোধ করতে পারে।
- পরিশোধ পরিকল্পনা: তারা ঋণগ্রহীতাকে কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের সুবিধা দিতে পারে।
### ৭. সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত
- জামানত তরলীকরণ: যদি ঋণটি জামানতের সাথে জড়িত থাকে (যেমন, গাড়ি বা সম্পত্তি), ঋণদাতা জামানত বাজেয়াপ্ত করে বিক্রি করে ঋণের অংশ বা সম্পূর্ণ পরিমাণ আদায় করতে পারে।
### ৮. আলোচনা এবং মধ্যস্থতা
- সরাসরি আলোচনা: ঋণদাতা বা কালেকশন এজেন্সি সরাসরি ঋণগ্রহীতার সাথে আলোচনা করে একটি সম্মতিপূর্ণ পরিশোধ পরিকল্পনায় পৌঁছাতে পারে।
- মধ্যস্থতা পরিষেবা: কিছু ক্ষেত্রে, ঋণদাতা এবং ঋণগ্রহীতার মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদনে সহায়তা করার জন্য একজন মধ্যস্থতাকারী জড়িত হতে পারে।
৯. ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ
- পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনা: ঋণদাতা বা কালেকশন এজেন্সি ঋণগ্রহীতার আর্থিক অবস্থা পর্যায়ক্রমিকভাবে পর্যালোচনা করতে পারে যাতে ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা আছে কিনা তা নির্ধারণ করা যায়।
১০. ঋণ আদায় কমিটি গঠন:
- ন্যায্য ঋণ আদায় অনুশীলন: অবলোপনকৃত ঋণ আদায় কার্যক্রমের জন্য মাঠ পর্যায়ে গঠিত ডেট কালেকশন ইউনিট কমিটি কর্তৃক নিবিড়ভাবে তদারকি ও পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
১১. অবলোপনকৃত ঋণের পাল্টা এন্টি
-আংশিক আদায়: ঋণ অবলোপনকৃত হওয়ার পর আংশিক অর্থ প্রদান করা হলে, ঋণদাতা অবলোপনকৃত ঋণের অংশটি বিপরীত হিসাবায়ন করতে পারে এবং আদায়কৃত পরিমাণ আয় হিসাবে স্বীকৃতি দিতে পারে।
প্রতিটি পদ্ধতির নিজস্ব সুবিধা এবং চ্যালেঞ্জ রয়েছে, এবং পদ্ধতির পছন্দ প্রায়শই ঋণগ্রহীতা এবং ঋণদাতার পুনরুদ্ধার কৌশলের উপর নির্ভর করে।
ঋণের কল ব্যাক প্রক্রিয়া সমূহ (call back procedures of loan):
কলব্যাক হলো ঋণদাতা (লেন্ডার) কর্তৃক অনুসরণকৃত একটি প্রক্রিয়া, যেখানে ঋণের আবেদনকারীর (বorrower) তথ্য যাচাই করা, ঋণের শর্তাবলী নিশ্চিত করা এবং ঋণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার জন্য একটি ফোন কল বা যোগাযোগ করা হয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঋণদাতা নিশ্চিত করে যে আবেদনকারী সঠিক ব্যক্তি, তার প্রদত্ত তথ্য সঠিক, এবং তিনি ঋণের শর্তাবলী বুঝে নিয়েছেন। এটি সাধারণত ঋণ অনুমোদনের আগে বা ঋণ চুক্তি চূড়ান্ত করার সময় করা হয়।
সাধারণ কলব্যাক প্রক্রিয়ার ধাপগুলি উল্লেখ করা হলো:
১. কলব্যাক নির্ধারণ:
- লোনের আবেদন জমা দেওয়ার পর, ঋণদাতা ধারকের সুবিধাজনক সময়ে একটি কলব্যাক নির্ধারণ করে। এটি সাধারণত আবেদন পাওয়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে করা হয়।
২. পরিচয় যাচাই:
- ঋণদাতা ধারকের পরিচয় যাচাই করবে। এজন্য তারা পুরো নাম, জন্ম তারিখ, সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর বা অন্যান্য পরিচয় সংক্রান্ত তথ্য জিজ্ঞাসা করতে পারে।
৩. আবেদনের বিবরণ নিশ্চিতকরণ:
- ঋণদাতা লোন আবেদনের বিবরণগুলি পর্যালোচনা করবে যাতে সব তথ্য সঠিক এবং সম্পূর্ণ কিনা তা নিশ্চিত হয়। এর মধ্যে ঋণের পরিমাণ, ঋণের উদ্দেশ্য, চাকরির তথ্য, আয় এবং অন্যান্য আর্থিক তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
৪. ঋণযোগ্যতা মূল্যায়ন:
- ঋণদাতা ধারকের ক্রেডিট ইতিহাস, ঋণ-থেকে-আয়ের অনুপাত এবং অন্যান্য ফ্যাক্টর নিয়ে আলোচনা করতে পারে যা ঋণযোগ্যতাকে প্রভাবিত করে। তারা এগুলির কীভাবে ঋণের শর্তাবলীকে প্রভাবিত করে তা ব্যাখ্যা করতে পারে।
৫. ঋণের শর্তাবলী ব্যাখ্যা:
- ঋণদাতা ঋণের শর্তাবলী ব্যাখ্যা করবে, যার মধ্যে সুদের হার, পরিশোধের সময়সূচী, ফি এবং বিলম্বিত বা আগে পরিশোধের জন্য জরিমানা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
৬. প্রশ্নের উত্তর:
- ধারককে ঋণের শর্তাবলী বা আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা বা উদ্বেগ প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হয়।
৭. সম্মতি এবং চুক্তি:
- যদি ধারক শর্তাবলীতে সম্মত হয়, তাহলে তাদের মৌখিক সম্মতি প্রদান করতে বলা হতে পারে বা ইলেকট্রনিকভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করতে বলা হতে পারে।
৮. চূড়ান্ত যাচাই:
- ঋণদাতা ধারকের চাকরি এবং আয়ের চূড়ান্ত যাচাই করতে পারে। এজন্য তারা নিয়োগকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে পারে বা অতিরিক্ত নথি চাইতে পারে।
৯. তহবিল বিতরণ:
- সব যাচাই সম্পূর্ণ হয়ে গেলে এবং ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে, ঋণদাতা চুক্তি অনুযায়ী তহবিল বিতরণ করবে (যেমন ডাইরেক্ট ডিপোজিট, চেক)।
১০. ফলো-আপ:
- ঋণ বিতরণের পর, ঋণদাতা ফলো-আপ কল করতে পারে যাতে নিশ্চিত হয় যে ধারক তহবিল পেয়েছে এবং তাদের প্রথম কিস্তির তারিখ মনে করিয়ে দেয়।
সঠিক প্রক্রিয়া ঋণদাতার নীতিমালা, ঋণের ধরন এবং নিয়ন্ত্রক প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। কিছু ঋণদাতার যাচাই প্রক্রিয়া আরও কঠোর হতে পারে, আবার অন্যরা ফিরে আসা গ্রাহকদের জন্য বা ছোট ঋণের জন্য প্রক্রিয়াটি সহজ করতে পারে। সর্বদা ঋণগ্রহীতার বিশ্বস্ততা এবং ঋণের সম্মতি দেওয়ার আগে সমস্ত শর্তাবলী বুঝে নিয়েছেন সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে ।
### ঋণ পুনতফসিলীকরণ ও এর উদ্দেশ্য (Loan rescheduling and its purposes)
ঋণ পুনতফসিলীকরণ হলো একটি ঋণের চুক্তির শর্তাবলী পরিবর্তন করার প্রক্রিয়া, যেখানে ঋণগ্রহীতা এবং ঋণদাতা উভয়ের সম্মতিতে ঋণের শর্ত সমূহ পুনর্বিন্যাস করা হয়। এতে সাধারণত ঋণের মেয়াদ বাড়ানো, সুদের হার কমানো, বা কিস্তির পরিমাণ ও সময়সূচী পরিবর্তন করা অন্তর্ভুক্ত থাকে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো ঋণগ্রহীতার জন্য ঋণ পরিশোধ করা সহজতর করা, বিশেষ করে যখন তারা আর্থিক সমস্যায় পড়েন।
1. আর্থিক চাপ কমানো: ঋণগ্রহীতার মাসিক কিস্তি কমিয়ে বা ঋণের মেয়াদ বাড়িয়ে তাদের আর্থিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
2. খেলাপি এড়ানো: ঋণগ্রহীতা যেন ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ না হয় তা নিশ্চিত করা, যা খেলাপির মতো গুরুতর পরিণতি (যেমন আইনি ব্যবস্থা, সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ, বা ক্রেডিট স্কোর নষ্ট হওয়া) থেকে বাঁচায়।
3. ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতার সম্পর্ক বজায় রাখা: ঋণদাতা ঋণগ্রহীতাকে সহজ শর্ত দিয়ে আর্থিক অবস্থার প্রতি নমনীয়তা এবং বোঝাপড়া দেখান, যাতে তারা ঋণ খেলাপি বা দেউলিয়াত্বের দিকে না যায়। এটি ঋণদাতা এবং ঋণগ্রহীতার মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করে।
4. অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা: অর্থনৈতিক মন্দা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ঋণ পুনতফসিলীকরণ অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে, কারণ এটি খেলাপির হার কমায়।
5. সুদের হার সমন্বয়: বাজারের অবস্থা বা ঋণগ্রহীতার আর্থিক অবস্থার পরিবর্তনের ভিত্তিতে ঋণ পুনঃতফশীলীকরণ এর মাধ্যমে সুদের হার পুনর্বিন্যাস করা হতে পারে।
6. ঋণদাতার ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা বৃদ্ধি: পুনতফসিলীকরণ করে ঋণদাতা ঋণের টাকা আদায়ের সম্ভাবনা বাড়ান, যদিও এটি সময়সাপেক্ষ হতে পারে।
৭. অলাভজনক ঋণ হ্রাস: পুনঃতফসিলীকরণ ঋণদাতাদের খাতা হতে নন-পারফর্মিং লোনের সংখ্যা কমাতে সাহায্য করে, যা তাদের আর্থিক স্বাস্থ্য এবং স্থিতিশীলতা উন্নত করতে পারে।
7. সংকটগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাকে সহায়তা: চাকরি হারানো, স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা, বা ব্যবসায় মন্দা ইত্যাদি কারণে আর্থিক সংকটে থাকা ঋণগ্রহীতাদের সহায়তা করা।
8. নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা: কিছু ক্ষেত্রে সরকার বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা সংকটকালে (যেমন COVID-19 মহামারী) ঋণ পুনতফসিলীকরণ বাধ্যতামূলক করতে পারে, যাতে ব্যক্তি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো সহায়তা পায়।
সামগ্রিকভাবে, ঋণ পুনতফসিলীকরণ হলো একটি আর্থিক সহায়তা ব্যবস্থা, যা ঋণগ্রহীতাকে ঋণ পরিশোধে সাহায্য করে এবং ঋণদাতাকে তাদের টাকা ফেরত পেতে সহায়তা করে। এটি উভয় পক্ষের জন্য উপকারী, কারণ এটি খেলাপি রোধ করে এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।
ব্যাংকের লাভজনকতার উপর সুদ মওকুফের প্রভাব (Effect on Profitability of Waiver of Interest):
খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কারণ সুদ আয় ব্যাংকগুলির আয়ের একটি প্রধান উৎস। যখন ব্যাংকগুলি ঋণ, ক্রেডিট কার্ড বা অন্যান্য ক্রেডিট পণ্যে সুদ মাফ করে, তখন এটি সরাসরি তাদের আর্থিক কর্মক্ষমতা প্রভাবিত করে। সুদ মওকুফের ফলে ব্যাংকগুলির লাভজনকতা কীভাবে প্রভাবিত হয়, তা নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো
### ১. সুদ আয় হ্রাস
- প্রাথমিক প্রভাব: সুদ মওকুফের ফলে ব্যাংকগুলির সুদ আয় সরাসরি কমে যায়, যা তাদের আয়ের একটি বড় অংশ। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি ব্যাংক কয়েক মাসের জন্য ঋণের সুদ মাফ করে, তবে সেই সময়ে তারা যে সুদ পেত তা থেকে বঞ্চিত হয়।
- দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব: যদি সুদ মওকুফ দীর্ঘ সময় ধরে চলে, তাহলে সুদ আয়ের ক্রমাগত ক্ষতি ব্যাংকের সামগ্রিক লাভজনকতাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
### ২. নেট ইন্টারেস্ট মার্জিন (NIM) উপর চাপ
- নেট ইন্টারেস্ট মার্জিন (NIM) হল ব্যাংক যে সুদ আয় করে এবং আমানতকারীদেরকে যে সুদ দেয় তার মধ্যে পার্থক্য। সুদ মওকুফের কারণে সুদ আয় কমে গেলে NIM সংকুচিত হয়, যা লাভজনকতা কমিয়ে দেয়।
- ব্যাংকগুলি তাদের অপারেশনাল খরচ মেটাতে এবং লাভ generat করতে NIM এর উপর নির্ভর করে। NIM কমে গেলে ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য দুর্বল হতে পারে।
### ৩. নন-পারফর্মিং অ্যাসেট (NPA) বৃদ্ধি
- সুদ মওকুফ সাধারণত আর্থিক সংকটে থাকা ঋণগ্রহীতাদের সাহায্য করার জন্য দেওয়া হয়, কিন্তু এটি খারাপ ঋণ চিহ্নিতকরণকে বিলম্বিত করতে পারে। যদি ঋণগ্রহীতারা মওকুফের পরেও ঋণ পরিশোধ করতে না পারে, তাহলে এই ঋণগুলি নন-পারফর্মিং অ্যাসেট (NPA) এ পরিণত হতে পারে।
- NPA বৃদ্ধি মানে ব্যাংকগুলিকে বেশি প্রভিশনিং খরচ বহন করতে হবে, যা লাভজনকতা আরও কমিয়ে দেয়।
### ৪. অপারেশনাল ও প্রশাসনিক খরচ বৃদ্ধি
- সুদ মওকুফ বাস্তবায়নের জন্য অতিরিক্ত প্রশাসনিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন হয়, যেমন ঋণগ্রহীতার যোগ্যতা মূল্যায়ন, আবেদন প্রক্রিয়াকরণ এবং প্রভাব মনিটরিং। এই কাজগুলি অপারেশনাল খরচ বাড়িয়ে দেয়।
- ব্যাংকগুলিকে মওকুফের আর্থিক প্রভাব মোকাবিলার জন্য অতিরিক্ত তহবিল সেট aside করতে হতে পারে, যা তাদের সম্পদকে চাপের মধ্যে ফেলতে পারে।
### ৫. গ্রাহক সম্পর্ক ও বিশ্বাসের উপর প্রভাব
- ইতিবাচক প্রভাব: সুদ মওকুফ দেওয়ার ফলে গ্রাহকের বিশ্বাস ও আনুগত্য বৃদ্ধি পেতে পারে, বিশেষ করে সংকটের সময়ে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা যেমন গ্রাহক ধরে রাখা এবং নতুন গ্রাহক আকর্ষণ করা সম্ভব হতে পারে।
- নেতিবাচক প্রভাব: যদি মওকুফ সঠিকভাবে পরিচালনা না করা হয়, তাহলে যেসব গ্রাহক এই সুবিধা পাচ্ছেন না তাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে, যা ব্যাংকের সুনামকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
### ৬. নিয়ন্ত্রক ও সরকারের প্রভাব
- কিছু ক্ষেত্রে সরকার বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা সংকটকালীন সময়ে অর্থনীতিকে সমর্থন করার জন্য সুদ মওকুফ বাধ্যতামূলক করতে পারে (যেমন COVID-19)। এটি ঋণগ্রহীতাদের সাহায্য করলেও ব্যাংকগুলির লাভজনকতাকে চাপের মধ্যে ফেলতে পারে, বিশেষ করে যদি সরকার ব্যাংকগুলিকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ বা সমর্থন না দেয়।
- যদি ব্যাংকগুলি মওকুফ সঠিকভাবে বা ন্যায্যভাবে বাস্তবায়ন না করে, তাহলে তারা নিয়ন্ত্রক তদন্তের মুখোমুখি হতে পারে।
### ৭. স্বল্পমেয়াদী বনাম দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
- স্বল্পমেয়াদী: সুদ মওকুফের ফলে লাভজনকতা তাৎক্ষণিকভাবে কমতে পারে, কিন্তু এটি ঋণগ্রহীতাদের সংকটকালীন সময়ে সাহায্য করে ডিফল্টের একটি বড় ঢেউ প্রতিরোধ করতে পারে।
- দীর্ঘমেয়াদী: যদি মওকুফ ঋণগ্রহীতাদের পুনরুদ্ধার করতে এবং নিয়মিত পেমেন্ট পুনরায় শুরু করতে সাহায্য করে, তাহলে ব্যাংকগুলি ভবিষ্যতে NPA হ্রাস এবং উন্নত repayment rate থেকে উপকৃত হতে পারে।
### ৮. শেয়ারহোল্ডার ও বিনিয়োগকারীদের উপর প্রভাব
- সুদ মওকুফের কারণে লাভজনকতা কমে গেলে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ কমতে পারে এবং ব্যাংকের শেয়ার মূল্য পড়ে যেতে পারে।
- বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকটিকে কম আকর্ষণীয় হিসাবে দেখতে পারেন যদি তারা মনে করেন যে এর লাভজনকতা ক্রমাগত চাপের মধ্যে রয়েছে।
### ব্যাংকগুলির জন্য প্রশমন কৌশল:
সুদ মওকুফের নেতিবাচক প্রভাব কমাতে ব্যাংকগুলি নিম্নলিখিত কৌশল অবলম্বন করতে পারে:
- আয়ের উৎস : ফি, কমিশন এবং wealth management পরিষেবার মতো non-interest আয়ের উৎসগুলিতে ফোকাস করা।
- খরচ অপ্টিমাইজেশন: অপারেশনাল খরচ কমানোর মাধ্যমে সুদ আয় হ্রাসের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া।
- টার্গেটেড মওকুফ: শুধুমাত্র সেসব ঋণগ্রহীতাদেরকে মওকুফ দেওয়া যাদের সত্যিই সাহায্য প্রয়োজন, blanket relief না দেওয়া।
- সরকারি সমর্থন: মওকুফের কারণে ক্ষতির জন্য সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ বা গ্যারান্টি চাওয়া
### সুদ মওকুফ স্বল্পমেয়াদে ব্যাংকগুলির লাভজনকতাকে চাপের মধ্যে ফেলতে পারে, কিন্তু এটি আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং সংকটকালীন সময়ে ঋণগ্রহীতাদের সাহায্য করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কার্যকর ব্যবস্থাপনা এবং কৌশলগত পরিকল্পনা নেতিবাচক প্রভাব প্রশমিত করতে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করতে পারে।
লিজিং অ-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কাজ হিসেবে স্বাতন্ত্র:
"লিজিং এনবিএফআই-এর (নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান) কাজ, তাই ব্যাংকের উচিত নয় লিজিং-এ জড়িত হওয়া" — এই বক্তব্যটি নিয়ে মতপার্থক্য থাকতে পারে। একে সমর্থন বা বিরোধিতা করার যুক্তি নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের উপর, যেমন নিয়ন্ত্রক কাঠামো, বাজার গতিশীলতা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কৌশলগত লক্ষ্য। নিচে এই বক্তব্যের পক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তিগুলো আলোচনা করা হলো:
বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি (সমর্থন):
1. বিশেষীকরণ এবং ফোকাস:
- এনবিএফআই-গুলো সাধারণত লিজিং এবং সম্পর্কিত কার্যক্রমে বিশেষজ্ঞ হয়, যা তাদের দক্ষতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে, ব্যাংকগুলোর এই ধরনের বিশেষীকরণের অভাব থাকতে পারে।
- ব্যাংকগুলো তাদের মূল কার্যক্রমে (যেমন জমা, ঋণ এবং পেমেন্ট সেবা) ফোকাস করে লিজিং-এর মতো অতিরিক্ত কার্যক্রম এড়াতে পারে।
2. ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা:
- লিজিং-এ সম্পদের অবচয়, রক্ষণাবেক্ষণ এবং লিজকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধারের মতো অনন্য ঝুঁকি জড়িত। এনবিএফআই-গুলো এই ঝুঁকিগুলো মোকাবেলায় বেশি দক্ষ।
- ব্যাংকগুলো ইতিমধ্যেই ঋণ এবং তরলতা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা করে, তাই লিজিং তাদের ঝুঁকি প্রোফাইলকে আরও জটিল করতে পারে।
3. নিয়ন্ত্রক বিবেচনা:
- কিছু দেশে, ব্যাংকগুলোর লিজিং কার্যক্রমে জড়িত হওয়া সীমিত করা হয় যাতে সংঘাত বা অতিরিক্ত ঝুঁকি নেওয়া এড়ানো যায়।
- এনবিএফআই-গুলো সাধারণত আলাদা নিয়ন্ত্রক কাঠামোর অধীনে কাজ করে, যা তাদের লিজিং কার্যক্রমের জন্য বেশি উপযোগী।
4. বাজার গতিশীলতা: এনবিএফআই-গুলো প্রায়শই নির্দিষ্ট বাজার বা গ্রাহকদের (যেমন ছোট ব্যবসা বা ব্যক্তি) জন্য কাস্টমাইজড লিজিং সমাধান প্রদান করে। ব্যাংকগুলোর এই ধরনের নমনীয়তা বা গ্রাহক অন্তর্দৃষ্টি নাও থাকতে পারে
### একটি ব্যাংকের লিজিং-এ জড়িত হওয়া উচিত কিনা তা নির্ভর করে তার কৌশলগত লক্ষ্য, ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা এবং নিয়ন্ত্রক পরিবেশের উপর। যদিও এনবিএফআই-গুলো বিশেষীকরণ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় প্রাকৃতিক সুবিধা রাখে, তবুও ব্যাংকগুলো লিজিং-এর মাধ্যমে তাদের সেবা বৈচিত্র্য আনতে এবং বিদ্যমান শক্তিগুলো কাজে লাগাতে পারে। তাই, এই বক্তব্য সর্বজনীনভাবে সত্য নয়, এবং ব্যাংকগুলো সঠিক দক্ষতা এবং নিয়ন্ত্রক সমর্থন থাকলে লিজিং-এ সফলভাবে জড়িত হতে পারে।
## টীকাসমূহ ##
সুদ সাসপেন্স হিসাব (Interest Suspense):
যদি কোনো ঋণ বা অগ্রিমকে ‗সাব-স্ট্যান্ডার্ড‘ এবং ‗সন্দেহজনক‘ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়, তবে এই ধরনের ঋণের উপর সঞ্চিত সুদ আয় হিসাবে জমা না করে সুদ সাসপেন্স হিসাবে জমা করা হবে। পুনর্বিন্যাসকৃত ঋণের ক্ষেত্রে, যদি কোনো অনাদায়ী সুদ থাকে, তবে তা আয় হিসাবে জমা না করে সুদ সাসপেন্স হিসাবে জমা করা হবে। যত তাড়াতাড়ি কোনো ঋণ বা অগ্রিমকে ’মন্দ বা কুঋণ‘ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়, তখন সেই হিসাবে সুদ আরোপ বন্ধ হয়ে যাবে। এই ধরনের ঋণ পুনরুদ্ধারের জন্য মামলা দায়ের করার ক্ষেত্রে, মামলা দায়েরের তারিখ পর্যন্ত সময়ের জন্য ঋণ হিসাবে সুদ আরোপ করা যেতে পারে যাতে মূলধন এবং সুদের পরিমাণের জন্য মামলা দায়ের করা যায়। তবে এভাবে ঋণ হিসাবে আরোপিত সুদ ‗সুদ সাসপেন্স‘ হিসাবে সংরক্ষণ করতে হবে। যদি কোনো বিশেষ কারণে ’মন্দ বা কুঋণ‘ হিসাবে কোনো সুদ আরোপ করা হয়, তবে তা ’সুদ সাসপেন্স‘ হিসাবে সংরক্ষণ করা হবে।
ব্যাক টু ব্যাক এলসি
ব্যাক টু ব্যাক এলসি (Letter of Credit) হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যবহৃত একটি বিশেষ আর্থিক ব্যবস্থা, যেখানে একটি মূল এলসির ভিত্তিতে সাধারণত মধ্যস্থ ব্যবসায়ী বা রপ্তানিকারকের প্রয়োজনে দ্বিতীয় একটি এলসি খোলা হয়, । ধরা যাক, একজন ক্রেতা তার ব্যাংক থেকে রপ্তানিকারকের জন্য একটি মূল এলসি ইস্যু করেন, যা পণ্য সরবরাহের বিপরীতে পেমেন্টের নিশ্চয়তা দেয়। রপ্তানিকারক বা মধ্যস্থ ব্যবসায়ী এই মূল এলসিকে নিরাপত্তা হিসেবে ব্যবহার করে তার সরবরাহকারীর কাছ থেকে পণ্য ক্রয়ের জন্য একটি নতুন এলসি খোলেন, যাকে ব্যাক টু ব্যাক এলসি বলা হয়। এই দ্বিতীয় এলসি মূল এলসির শর্তের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তবে পরিমাণ বা মূল্যে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, কারণ মধ্যস্থ ব্যবসায়ী তার লাভের অংশ যোগ করতে পারেন। এই ব্যবস্থা মধ্যস্থ ব্যবসায়ীকে নিজের আর্থিক সংস্থান ব্যবহার না করে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ দেয়, ঝুঁকি হ্রাস করে এবং ক্রেতা ও সরবরাহকারীর মধ্যে পণ্য সরবরাহের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে।
ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম
ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম হলো এমন একটি আর্থিক ব্যবস্থা, যেখানে একটি গ্যারান্টি প্রতিষ্ঠান বা সরকারি সংস্থা ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানকে (যেমন ব্যাংক) ঋণগ্রহীতার ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে আংশিক বা পূর্ণ ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা প্রদান করে। এই স্কিমটি বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (SME), কৃষি, বা অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে সহায়তা করে, যেখানে ঋণগ্রহীতার কাছে পর্যাপ্ত জামানত বা ক্রেডিট ইতিহাস নাও থাকতে পারে। গ্যারান্টি প্রতিষ্ঠান ঋণের একটি নির্দিষ্ট শতাংশের জন্য দায়বদ্ধ থাকে, যা ব্যাংকের ঝুঁকি কমায় এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ঋণের প্রাপ্যতা বাড়ায়। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংক ঋণ সহজলভ্য করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তৃতীয় পক্ষের গ্যারান্টি:
ঋণের ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের গ্যারান্টি হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে ঋণগ্রহীতা এবং ঋণদাতা (যেমন ব্যাংক) ছাড়া একটি তৃতীয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ঋণ পরিশোধের দায়বদ্ধতা গ্রহণ করে, যদি ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়। এই তৃতীয় পক্ষ, যাকে গ্যারান্টর বলা হয়, ঋণের পুরো বা আংশিক পরিমাণ পরিশোধের জন্য আইনগতভাবে দায়বদ্ধ থাকে। এই গ্যারান্টি ঋণদাতার ঝুঁকি কমায় এবং ঋণগ্রহীতার জন্য ঋণ পাওয়া সহজ করে, বিশেষ করে যখন ঋণগ্রহীতার কাছে পর্যাপ্ত জামানত বা ক্রেডিট যোগ্যতা না থাকে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো ব্যক্তি তার বন্ধুর ঋণের জন্য গ্যারান্টর হিসেবে দাঁড়ালে, বন্ধু ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে গ্যারান্টরকে ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
লেন্ডার অব লাস্ট রিসোর্ট
লেন্ডার অব লাস্ট রিসোর্ট বা শেষ অবলম্বনের ঋণদাতা হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান, সাধারণত একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (যেমন বাংলাদেশে বাংলাদেশ ব্যাংক), যেটি আর্থিক সংকটের সময় বাণিজ্যিক ব্যাংক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান করে, যখন তারা অন্য কোনো উৎস থেকে তহবিল পেতে ব্যর্থ হয়। এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হলো আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা রক্ষা করা, ব্যাংকের দেউলিয়া হওয়া রোধ করা এবং বাজারে তারল্য সংকট প্রতিরোধ করা। তবে, এই ঋণ সাধারণত কঠোর শর্তে এবং উচ্চ সুদের হারে দেওয়া হয়, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো এটিকে শুধুমাত্র জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যবহার করে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৮ সালের বিশ্ব আর্থিক সংকটে অনেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ভূমিকা পালন করেছিল।
ওপেন মার্কেট অপারেশন (Open Market Operation):
ওপেন মার্কেট অপারেশন (Open Market Operation) হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি মুদ্রানীতি সরঞ্জাম, যার মাধ্যমে তারা অর্থনীতিতে অর্থের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে। এই প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক) সরকারি সিকিউরিটিজ, যেমন- ট্রেজারি বিল বা বন্ড, ক্রয় বা বিক্রয় করে। যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিকিউরিটিজ ক্রয় করে, তখন এটি বাণিজ্যিক ব্যাংক বা বাজারে অর্থ ঢোকায়, ফলে অর্থের সরবরাহ বৃদ্ধি পায় এবং সুদের হার কমে। বিপরীতভাবে, সিকিউরিটিজ বিক্রয় করলে বাজার থেকে অর্থ শোষণ করা হয়, যা অর্থের সরবরাহ হ্রাস করে এবং সুদের হার বাড়ায়। এই প্রক্রিয়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ, মূল্যস্ফীতি বাড়লে বাংলাদেশ ব্যাংক বন্ড বিক্রি করে তারল্য কমাতে পারে।
ক্রেডিট ডেরিভেটিভ
ক্রেডিট ডেরিভেটিভ হলো এক ধরনের আর্থিক চুক্তি বা উপকরণ, যা কোনো ঋণ বা ক্রেডিট সম্পর্কিত ঝুঁকি এক পক্ষ থেকে অন্য পক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত ক্রেডিট ঝুঁকি (যেমন ঋণগ্রহীতার ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতা) ব্যবস্থাপনার জন্য ডিজাইন করা হয়। সবচেয়ে সাধারণ ক্রেডিট ডেরিভেটিভ হলো ক্রেডিট ডিফল্ট সোয়াপ (CDS), যেখানে একটি পক্ষ (ক্রেতা) নিয়মিত প্রিমিয়াম প্রদান করে অন্য পক্ষের (বিক্রেতা) কাছে, এবং বিনিময়ে ঋণগ্রহীতা ডিফল্ট করলে বিক্রেতা ক্ষতিপূরণ দেয়। এই উপকরণ ব্যাংক, বিনিয়োগকারী এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ঝুঁকি হেজ করতে বা ক্রেডিট সম্পর্কিত লাভের সুযোগ তৈরি করতে সহায়তা করে। তবে, এগুলো জটিল হওয়ায় এবং ভুল ব্যবহারে আর্থিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে, যেমন ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটে দেখা গিয়েছিল।
0 Comments